বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলায় বন্যায় প্রায় ৩৪ লক্ষ লোক পানিবন্দী হয়ে
পড়েছে। দুর্গত এলাকাগুলোতেই ইতিমধ্যেই ত্রাণ সহায়তা বিতরণ শুরু হয়েছে।
তবে প্রয়োজনের তুলনায় তা অপ্রতুল। পাশাপাশি বন্যার পানিতে ফসলের ব্যাপক
ক্ষতি হচ্ছে বলে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে।
বন্যা
সতর্কীকরণ কেন্দ্র জানায়, আগামী কয়েকদিনে দেশের নদীগুলোতে বন্যার পানি
আরও বাড়তে পারে। বাংলাদেশে গত ২৪ ঘন্টায় ৫৩টি স্থানে বন্যার পানি বেড়েছে
এবং অধিকাংশ স্থানেই নদ-নদীতে পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।প্রবল
বর্ষণ আর পাহাড়ী ঢলের কারণে দেশের চারটি অববাহিকার নদ-নদীগুলোর ৮৫টি
নির্ধারিত পয়েন্টের মধ্যে ৫৩ টিতে গত ২৪ ঘন্টায় পানি প্রবাহ বেড়ে বন্যা
পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। দেশজুড়ে প্রায় ২৫টি নদ-নদীর পানি এখন
বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে । আমাদের প্রতিনিধিদের পাঠানো
প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানা গেছে।বন্যা
পূর্বাভাস কেন্দ্রের নির্বাহী প্রকৌশলী আমিরুল হোসেন বলছেন সিলেট এলাকায়
পানির উচ্চতা বেশি, তবে বন্যার পানির অব্যাহত বৃদ্ধিতে সংকট মোকাবেলা করছে
দেশের উত্তরাঞ্চলীয় কয়েকটি জেলা । আগামী কয়েকদিনে বন্যা পরিস্থিতি কেমন
হতে পারে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সবগুলো অববাহিকাতেই পানির প্রবাহ
বৃদ্ধির প্রবণতা অব্যাহত থাকার সম্ভাবনাই বেশি, তবে এ নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার
কিছু নেই বলে জানান তিনি ।
সারাদেশে
ঠিক কি পরিমান মানুষ পানিবন্দী বা বিপর্যস্ত অবস্থায় আছে সেটি জানাতে
পারেননি কর্মকর্তারা। তবে তাদের তথ্য অনুযায়ী উত্তরাঞ্চলের কয়েকটি জেলার
পাশাপাশি নেত্রকোনা, সিরাজগঞ্জ ও সিলেট অঞ্চলে কয়েক লাখ মানুষ বন্যা
কবলিত। এর মধ্যে উত্তরের জেলাগুলোতে ফসলের ক্ষতি হচ্ছে।প্রধান
প্রধান নদনদীগুলোর পানি বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় আজ
ব্রক্ষপুত্র অববাহিকার চর ও নিম্নাঞ্চলের আরও নতুন নতুন এলাকা আজ প্লাবিত
হয়েছে। জেলার প্রধান প্রধান নদনদীগুলোর পানি বিভিন্ন পয়েন্টে আজ বিপদসীমার
উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল।পানি
উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা যায়, আজ সকাল ৬টা পর্যন্ত বৃষ্টিপাত কম হওয়া
সত্ত্বেও ও উজান থেকে আসা পানির কারনে কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, লালমনিরহাট,
নীলফামারি, বগুড়া ও সিরাজগঞ্জ জেলার বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে।সংশ্লিষ্ট
জেলা প্রশাসক, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, ত্রান ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা,
স্থানীয় জনপ্রতিনিধিবৃন্দ এবং বিভিন্ন এনজিও বন্যা কবলিত এলাকার বন্যা
পরিস্থিতি পর্যবেক্ষন করছেন এবং ত্রান সামগ্রি বিতরনসহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা
নিচ্ছেন।রংপুরের বিভাগীয় কমিশনার
মুহাম্মদ দিলাওয়ার বখত সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসকদের সাথে সমন্বয় করছেন,
অন্যদিকে পানি উন্নয়ন বোর্ড ও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা
বিভিন্ন উপদ্রুত এলাকা পরিদর্শন করছেন।কুড়িগ্রামের
ত্রান ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা আবদুল মোতালিব, গাইবান্ধার হাবিবুর রহমান এবং
আবদুস সালাম জানান, বন্যা দুর্গতদের মাঝে চাল ও নগদ অর্থ বিতরন করা হচ্ছে।
এদিকে,
পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে আজ সকাল ৬টায়, যমুনা নদী বাহাদুরাবাদ,
সারিয়াকান্দি ও সিরাজগঞ্জে বিপদসীমার যথাক্রমে ১৫ সেমি, ৯ সেমি ও ৭ সেমি
উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। আর ধরলা নদী কুড়িগ্রাম পয়েন্টে বিপদসীমার ২০
সেমি উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। অন্যদিকে, আজ তিস্তার পানি ডালিয়া ৫ সেমি
কমলেও তা বিপদসীমার ২৫ সেমি উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। উজান থেকে নেমে আসা
জলরাশি ব্রক্ষপুত্র নদ ফুলছড়ি ও চিলমারী পয়েন্টে যথাক্রমে বিপদসীমার ৫ সেমি
এবং ৩ সেমি উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। আত্রাই নদী বাঘাবাড়ি পয়েন্টে বিপদ
সীমার ১৩৪ সেমি উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল।জামালপুর:
যমুনা নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় জামালপুর জেলার সার্বিক বন্যা
পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে।সরিষাবাড়ি উপজেলায় বাসুরিয়া এবং ইসলামপুরের
বেলগাছায় নদীর ভাঙ্গন ব্যাপক আকার ধারণ করেছে। ইসলামপুর, দেওয়ানগঞ্জ,
বকশিগঞ্জ, মাদারগঞ্জ, মেলান্দহ, সদর এবং সরিষাবাড়ি উপজলায় এক লাখ ৪৬ হাজার
৩৪০ জন বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।পানি
উন্নয়ন বোর্ড অফিস সূত্র জানায়, আজ দুপুর ১২টা পর্যন্ত বাহাদুরাবাদ ঘাট
পয়েন্টে যমুনার পানি বিপদসীমার ১৯ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল।
গত ২৪ ঘন্টায় পানি বেড়েছে ১৬ সেন্টিমিটার। উজান থেকে ঢল নামায় এবং অব্যাহত
বৃষ্টিপাতের ফলে পানি আরো বাড়বে বলে ধারণা করা হচ্ছে।হবিগঞ্জ
: জেলার নদীগুলোতে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। টানা বৃষ্টিপাত ও উজান থেকে
আসা ঢলে নদীর এ অবস্থা সৃষ্টি হচ্ছে। এদিকে কুশিয়ারা নদীর পানি বৃদ্ধির
ফলে প্লাবিত এলাকাগুলোর পরিবারের লোকজন চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন। কুশিয়ার
নদীর বাঁধ ভেঙ্গে বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হওয়ার আশংকায় লোকজন রাত জেগে
বাঁধ পাহাড়া দিচ্ছেন।হবিগঞ্জ পানি
উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী সৈয়দ সহিদুল আলম জানান, বুধবার
খোয়াই নদীর পানি বেড়ে ৮ দশমিক ২০ মিটার থেকে ৮ দশমিক ৬ মিটার এবং কুশিয়ার
নদীর পানি ৮ দশমিক ৭৪ মিটার থেকে ৮ দশমিক ৮২ মিটার বিপদসীমার ওপর দিয়ে
প্রবাহিত হচ্ছে। বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকলে ও উজান থেকে ঢল নামলে এ অবস্থার
আরো খারাপ হতে পারে। তিনি জানান, নদীর পানি বৃদ্ধির বিষয়ে পানি উন্নয়ন
বোর্ড সজাগ দৃষ্টি রাখছে। প্রয়োজনীয় সকল পরিস্থিতি মোকাবেলায় প্রস্তুতি
রয়েছে।বগুড়া : বন্যার পানি কমতে না
কমতেই গত মঙ্গলবারের প্রবল বর্ষণে ও উজান থেকে নেমে আসা ঢলে জেলার
সারিয়াকান্দিতে যমুনার পানি বৃদ্ধি পেয়ে নতুন করে বন্যা দেখা দিয়েছে। গত
সোমবার বন্যার পানি কমে বিপদসীমার ৮ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল।
মঙ্গলবারের বর্ষণে যমুনার পানি ১৯ সেন্টিমিটার পানি বৃদ্ধি পেয়ে আজ বুধবার
সকালে তা ২৭ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। এতে সারিয়াকান্দি উপজেলার
চালুয়াবাড়ি, কাজলা, কর্ণিবাড়ি, বোহাইল, চন্দনবাইশা, হাটশেরপুর, কুতুবপুর, ও
সদর এলাকা পুনরায় প্লাবিত হয়েছে।জেলা
প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, বন্যা দুর্গত এলাকায় ত্রাণ হিসেবে এ পর্যন্ত ৭০
মেট্রিক টন চাল ও ৫ লাখ ৭৫ হাজার টাকা বিতরণ করা হয়েছে। এর মধ্যে গতকাল
মঙ্গলবার জেলার আদমদীঘি ও শিবগঞ্জ উপজেলায় ১০ মেট্রিক টন করে চাল বিতরণ করা
হয়েছে।সিলেট : সিলেটের নদ-নদী ও
হাওরাঞ্চলে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত হয়েছে। বিপদসীমা অতিক্রম করেছে সুরমা,
কুশিয়ারার পানি। পুরো বিভাগ জুড়ে দেখা দিয়েছে বন্যা। গত তিনদিনের মুষলধারার
বৃষ্টিতে বন্যা পরিস্থিতির আরো অবনতি হয়েছে। ফলে প্লাবিত হচ্ছে নতুন নতুন
এলাকা।এতে ফসলি জমি ও বীজতলা তলিয়ে
গেছে। রাস্তাঘাট, হাটবাজার, ঘরবাড়িতে পানি উঠেছে। বন্ধ হয়ে গেছে বিভিন্ন
শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। বিশেষ করে নিম্নাঞ্চলের হাজার হাজার মানুষ পানিবন্দি
অবস্থায় মানবেতর জীবনযাপন করছেন। বেকার হয়ে পড়েছেন কর্মজীবী মানুষ। বন্ধ
হয়ে গেছে অসংখ্য ব্যবসা প্রতিষ্ঠান।সিলেট
পানি উন্নয়ন বোর্ড জানিয়েছে, প্রবল বৃষ্টি ও পাহাড়ি অঞ্চল থেকে নেমে আসা
ঢলের কারণে পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। সোমবার থেকে সুরমা ও কুশিয়ারা নদীর পানি
সবক’টি পয়েন্টে বিপদসীমার ওপরে অবস্থান করছে। মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৬টায় সুরমা
নদীর পানি কানাইঘাট পয়েন্টে ১ দশমিক ৬৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত
হচ্ছিল। এই পয়েন্টে বিপদসীমা ১৩ দশমিক ২০ সেন্টিমিটার। অনেক আগেই বিপদসীমা
অতিক্রম করেছে।একই নদীর সুনামগঞ্জ
পয়েন্টে পানি উন্নয়ন বোর্ড সন্ধ্যায় ৮ দশমিক ৮১ সেন্টিমিটার লেভেল রেকর্ড
করেছে। এই পয়েন্টে বিপদসীমা ৮ দশমিক ২৫ সেন্টেমিটার। যদিও সকাল থেকে এ
পয়েন্টে পানি কমছে। ভোর ৬টায় এখানে পানির লেভেল ছিল ৮ দশমিক ৮৭
সেন্টিমিটার।জৈন্তাপুর, কোম্পানীগঞ্জ
ও গোয়াইনঘাট উপজেলায় পাহাড়ী ঢল আর অবিরাম বৃষ্টিতে বিস্তীর্ণ এলাকা
প্লাবিত হয়েছে। অধিকাংশ এলাকার মানুষ পানিবন্দী রয়েছেন। উপজেলা সদরের সাথে
যোগাযোগ প্রায় বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।
কয়েক হাজার হেক্টর জমির আমন ও আউশ ইরি
ক্ষেতের ব্যাপক ক্ষতি দেখা দিয়েছে।ঢাকা
: টানা বর্ষণে পদ্মা নদীর অব্যাহত পানি বৃদ্ধিতে ঢাকা জেলার দোহার উপজেলায়
৬টি ইউনিয়ন ও নবাবগঞ্জ উপজেলার ২টি ইউনিয়নের চরাঞ্চল ও নিম্নাঞ্চল প্লাবিত
হয়েছে। এতে দূর্ভোগে পড়েছে এ অঞ্চলের অর্ধলক্ষাধিক মানুষ। অন্যদিকে,
বিশুদ্ধ পানির সংকটে নানা পানি বাহিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছে বন্যা কবলিত
মানুষ। পানি বন্দী এলাকায় কোন ত্রাণ এখনও পৌঁছেনি বলে এলাকাবাসী জানিয়েছেন।বন্যা
পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র শ্রীনগরের ভাগ্যকুল রেঞ্জ সূত্রে জানা
গেছে, গত ২৪ ঘন্টায় পদ্মা নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে বুধবার সকাল ১০টা পর্যন্ত
বিপদ সীমার ১০ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তবে বন্যা পূর্বাভাস ও
সতর্কীকরণ কেন্দ্রের পূর্বাভাসে জানা গেছে, আগামীকাল বৃহস্পতিবারের পর
থেকে পানি আরো ১০/১১ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেতে পারে।দোহার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নুরুল করিম ভূইয়া বলেন, বন্যা দূর্গতদের জন্য ত্রাণ বরাদ্ধ চেয়ে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।সমুদ্র
বন্দরে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্কতা সংকেত: আবহাওয়া অধিদপ্তরের এক সংবাদ
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, মৌসুমী বায়ু সক্রিয় হওয়ার কারণে উত্তর বঙ্গোপসাগর
এলাকায় গভীর সঞ্চালনশীল মেঘমালা তৈরি হচ্ছে। এর প্রভাবে উত্তর বঙ্গোপসাগরে ও
তৎসংলগ্ন বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকায় এবং সমুদ্র বন্দরসমূহের ওপর দিয়ে ঝড়ো
হাওয়া বয়ে যেতে পারে।চট্টগ্রাম,
কক্সবাজার, মংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দরসমূহকে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্কতা সংকেত
দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। উত্তর বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত মাছ ধরার নৌকা ও
ট্রলারসমূহকে পরবর্তীতে নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত উপকূলের কাছাকাছি এসে
সাবধানে চলাচল করতে বলা হয়েছে।
জেলা
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক সুভাষ চন্দ্র দেবনাথ জানান, বন্যায়
চরাঞ্চলের প্রায় ৪০০ হেক্টর জমির আমন খেত পানিতে তলিয়ে গেছে।
বগুড়া :
বগুড়ার সারিয়াকান্দিতে বন্যার পরিস্থিতির অবনতি অব্যাহত রয়েছে।
বন্যানিয়ন্ত্রণ বাঁধের আরো ৫০০ মিটার নদীগর্ভে বিলীন হওয়ার পর প্লাবিত
হচ্ছে নতুন নতুন এলাকা। সারিয়াকান্দি, ধুনট, সোনাতলা, শাজাহানপুর এবং
গাবতলী এই- পাঁচ উপজেলার দুই শতাধিক গ্রাম প্লাবিত হয়েছে।বিপৎসীমার
ওপর দিয়ে পানি প্রবাহ অব্যাহত রয়েছে। মানবেতর জীবন কাটাচ্ছেন অন্তত দুই
লাখেরও বেশি পানিবন্দি মানুষ। খোলা আকাশের নিচে দিন যাপন করছেন অনেকেই।
সারিয়াকান্দি
উপজেলার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা প্রত্যয় হাসান জানান, সারিয়াকান্দিতে এ
পর্যন্ত ৪৭ হাজার পরিবার পানিবন্দি রয়েছে। লক্ষাধিক মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত আর
পানির নিচে নিমজ্জিত রয়েছে ১০ লাখ হেক্টর আবাদি জমি। ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য
আশ্রয়ণ কেন্দ্র খোলা হয়েছে বলেও জানান তিনি। সোনাতলা উপজেলা
নির্বাহী অফিসার ফিরাজুল ইসলাম জানান, এই উপজেলায় ২৬টি গ্রাম প্লাবিত
হয়েছে। সাড়ে আট হাজার পরিবার পানিবন্দি এবং এখানে পানির নিচে নিমজ্জিত ১০
হাজার ৩৫ হেক্টর আবাদি জমি।ধুনট উপজেলা নির্বাহী অফিসার জানান,
ধুনট পৌর এলাকা ও সদরসহ ৫০টি গ্রামে পানি প্রবেশ করেছে। লক্ষাধিক মানুষ
পানিবন্দি। ছোট-বড় সব জলাশয় তলিয়ে গেছে।এ ছাড়া গাবতলী ও শাজাহানপুরের ২০টি গ্রামে নতুন করে পানি ঢুকতে শুরু করেছে।পানি
উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী নুরুল ইসলাম সরকার জানান, এখনো উজানের
পাহাড়ি ঢল যমুনায় প্রবেশ করছে। ফলে পরিস্থিতির অবনতি ঘটছে। তবে দু-এক দিনে
মধ্যে কিছুটা উন্নতির সম্ভাবনা রয়েছে।
জামালপুর :
জামালপুরের সার্বিক বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত রয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় যমুনার
পানি কিছুটা কমলেও আজ সোমবার সকালে বিপৎসীমার ৩০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে
প্রবাহিত হচ্ছে।টানা ১৫ দিন ধরে বিপৎসীমার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত
হওয়ায় দুর্গত এলাকায় কাজ ও খাদ্যের তীব্র সংকট চলছে। দুর্গত এলাকায় ছড়িয়ে
পড়ছে পানিবাহিত রোগ।
জামালপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক
মো. আবুল কাসেম জানিয়েছেন, জেলার প্রায় ৩৪ হাজার হেক্টর জমির ফসল পানিতে
নিমজ্জিত আছে। এর মধ্যে শুধু রোপা আপন হলো ৩২ হাজার হেক্টর। ক্ষতিগ্রস্ত
হয়েছে জেলার প্রায় দুই লাখ ৩০ হাজার কৃষক। বন্যার ক্ষতি পুষিয়ে নিতে আগামী
রবি মৌসুমে কৃষি পুনর্বাসন কর্মসূচির আওতায় ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের সহায়তা করা
হবে বলে তিনি জানান।জেলা মৎস্য কর্মকর্তা রণজিৎ কুমার পাল জানান,
জেলার প্রায় আড়াই হাজার পুকুর বন্যার পানিতে ভেসে গেছে। এতে কী পরিমাণ
ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, তা জানার জন্য মৎস্য বিভাগ তথ্য সংগ্রহ করছে।