জীবনে সফল হতে চান ?????


সফল হবার জন্য অন্যের মত নয়, নিজের মত হোন…

ইস…! “যদি অমন সুন্দর হতাম আমি” “আরও একটু যদি লম্বা হতাম” , “অমন সুন্দর দেহ যদি আমার থাকতো” “আমারও যদি অমন একটা কিছু থাকতো” হায়…! আপনার এমন সব আকাঙ্ক্ষার নামই মনস্তাত্ত্বিক হতাশা।
বেশিরভাগ ক্ষেত্রে মানুষের জীবনটাই কেটে যায় এমন সব হতাশামুলক আচরণ আর চিন্তাধারায়।মানুষের শ্রেষ্ঠ হবার আকাঙ্ক্ষাটা চিরন্তন। বরাবরই মানুষ চেয়েছে অন্যের থেকে নিজেকে শ্রেষ্ঠতম স্থানে নিয়ে যেতে। অথচ মানুষ জানেই না, অন্যকে পিছনে ফেলে নিজেকে এগিয়ে যাবার বাসনা বস্তুত নিজেকেই ছোট করে।সম্পূর্ণ নিশ্চিত থাকতে পারেন, আরেকজনকে হারিয়ে আপনি কোনওদিন সফল হতে পারবেন না। বরং আপনি আপনার মতো থেকে আপনার জায়গাতেই কেমন করে উন্নতি করবেন, সে চেষ্টাই যদি করেন দেখবেন আপনার সাফল্য দিন দিন বেড়েই চলেছে। সফল ব্যক্তিদের কাহিনী পড়েন, দেখবেন তারা কেউই অন্যকে হারাতে চাননি, বরং তারা নিজেদের জায়গায় থেকে জিততে চেয়েছেন।হতে পারে আপনি সুদর্শন নয়, কিন্তু তাতে কি? আপনি তো আপনার বৈশিষ্ট্যে বৈশিষ্ট্যামণ্ডিত। আপনার ভেতরেই এমন সব গুণ রয়েছে যা অন্য যে কোনো মানুষের ভেতরে নেই।লম্বায় একটু খাটো হয়েছেন বলে যে হতাশার সীমা থাকবে না এমনটি নয়। আপনার শারীরিক দৈর্ঘ্য আপনাকে সফল করবে না, বরং আপনার মস্তিষ্কের প্রখরতার দৈর্ঘ্য আপনাকে সাফল্যমণ্ডিত করে তুলবে।এখানে আবার মনে রাখা প্রয়োজন, মস্তিষ্ক আর মেধা দুটো আলাদা জিনিস। মস্তিষ্ক আপনাকে সঠিক সময়ে সঠিক কাজ করার পথ দেখাবে আর মেধা আপনার কাজের ক্ষেত্রে সহায়ক ভুমিকা পালন করবে। সফল ব্যক্তিদের অনেকেই খুব কম মেধাসম্পন্ন ছিলেন, বরং তারা ছিলেন উর্বর মস্তিষ্কের পরিশ্রমী ব্যক্তি, যার কারণে সঠিক সময়ে সঠিক কাজটি করে তারা আজ সফল।আপনার যা কিছু নেই তা নিয়ে আপনি হতাশায় ভুগবেন না বরং যা আছে তাই নিয়েই উন্নতি করার চেষ্টা করুন। মনে রাখবেন-একই সৃষ্টিকর্তার সৃষ্টি আমরা। তিনি নিজেই আমাদেরকে এক এক রকমের অনুদান দিয়ে আমাদেরকে পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন। সৃষ্টিকর্তা আপনার পাশের মানুষটিকে সুন্দর স্বাস্থ্যের অধিকারী করেছেন, তিনি পারলে আপনাকেও সমপরিমাণ স্বাস্থ্য বা ঐশ্বর্যের মালিক করতে পারতেন। কিন্তু তিনি তা করেননি, কারণ সৃষ্টিকর্তা ভালো করেই জানেন কার কিসে মঙ্গল। কেননা মঙ্গলটা তো তারই সৃষ্টি।
কারও হয়তো অঢেল সম্পত্তি আছে, মনে হতে পারে অমন সম্পদ আপনার থাকলে আপনিও কিছু করে দেখাতে পারতেন। কিন্তু সত্যিই যদি ব্যাপারটা তাই হতো, তাহলে যিনি সম্পত্তির মালিক তিনি নিজেও অনেক আগেই সফল ব্যাক্তিত্ব হতে পারতেন। একটু খেয়াল করে দেখুন, অঢেল সম্পদ থাকলেও সেই মানুষটি মানুষের শ্রদ্ধা অর্জন করতে পারেননি। ঠিক এমনি ভাবেই একই কথা সকল ক্ষেত্রে প্রযোজ্য।সুতরাং নিজের মনের এমন দুশ্চিন্তা দূর করে ফেলুন। অহেতুক হতাশা আপনাকে শুধু অন্যের ব্যাপারে ভাবিয়ে নিজের ব্যাপারে উদাসীন করে দিবে। এর থেকে বরং নিজের ব্যাপারে ভেবে, নিজের সম্পদ আর সম্বলটুকু নিয়ে সে অনুপাতে কাজ করে যান।মনে রাখবেন, অন্যের যা কিছু আছে তা নিয়ে ভেবে শুধু শুধু নিজে কষ্ট পাবেন কিন্তু তাতে কোন দিনও ভাগ পাবেন না। তাই অন্যের ব্যাপারে পার্থক্য করে নিজে নিজে কষ্ট না পেয়ে আপনি আপনার জায়গায় থেকে সফল হবার চেষ্টা করুন। দেখবেন, যাদের সুযোগ ছিল ভালো কিছু করার, যাদেরকে দেখে আপনি আফসোস করেছেন, একদিন তারাই আপনার সফলতার ভারে নুয়ে পড়বে।

এই দিকে একবার খেয়াল করুন, বন্যায় সারা দেশে অন্তত ৩৪ লাখ মানুষ পানিবন্দী !!!!!!!!!

বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলায় বন্যায় প্রায় ৩৪ লক্ষ লোক পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। দুর্গত এলাকাগুলোতেই ইতিমধ্যেই ত্রাণ সহায়তা বিতরণ শুরু হয়েছে। তবে প্রয়োজনের তুলনায় তা অপ্রতুল। পাশাপাশি বন্যার পানিতে ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে বলে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে।
বন্যা সতর্কীকরণ কেন্দ্র জানায়, আগামী কয়েকদিনে দেশের নদীগুলোতে বন্যার পানি আরও বাড়তে পারে। বাংলাদেশে গত ২৪ ঘন্টায় ৫৩টি স্থানে বন্যার পানি বেড়েছে এবং অধিকাংশ স্থানেই নদ-নদীতে পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।প্রবল বর্ষণ আর পাহাড়ী ঢলের কারণে দেশের চারটি অববাহিকার নদ-নদীগুলোর ৮৫টি নির্ধারিত পয়েন্টের মধ্যে ৫৩ টিতে গত ২৪ ঘন্টায় পানি প্রবাহ বেড়ে বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। দেশজুড়ে প্রায় ২৫টি নদ-নদীর পানি এখন বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে । আমাদের প্রতিনিধিদের পাঠানো প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানা গেছে।বন্যা পূর্বাভাস কেন্দ্রের নির্বাহী প্রকৌশলী আমিরুল হোসেন বলছেন সিলেট এলাকায় পানির উচ্চতা বেশি, তবে বন্যার পানির অব্যাহত বৃদ্ধিতে সংকট মোকাবেলা করছে দেশের উত্তরাঞ্চলীয় কয়েকটি জেলা । আগামী কয়েকদিনে বন্যা পরিস্থিতি কেমন হতে পারে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সবগুলো অববাহিকাতেই পানির প্রবাহ বৃদ্ধির প্রবণতা অব্যাহত থাকার সম্ভাবনাই বেশি, তবে এ নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই বলে জানান তিনি ।
সারাদেশে ঠিক কি পরিমান মানুষ পানিবন্দী বা বিপর্যস্ত অবস্থায় আছে সেটি জানাতে পারেননি কর্মকর্তারা। তবে তাদের তথ্য অনুযায়ী উত্তরাঞ্চলের কয়েকটি জেলার পাশাপাশি নেত্রকোনা, সিরাজগঞ্জ ও সিলেট অঞ্চলে কয়েক লাখ মানুষ বন্যা কবলিত। এর মধ্যে উত্তরের জেলাগুলোতে ফসলের ক্ষতি হচ্ছে।প্রধান প্রধান নদনদীগুলোর পানি বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় আজ ব্রক্ষপুত্র অববাহিকার চর ও নিম্নাঞ্চলের আরও নতুন নতুন এলাকা আজ প্লাবিত হয়েছে। জেলার প্রধান প্রধান নদনদীগুলোর পানি বিভিন্ন পয়েন্টে আজ বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল।পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা যায়, আজ সকাল ৬টা পর্যন্ত বৃষ্টিপাত কম হওয়া সত্ত্বেও ও উজান থেকে আসা পানির কারনে কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, লালমনিরহাট, নীলফামারি, বগুড়া ও সিরাজগঞ্জ জেলার বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে।সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসক, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, ত্রান ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা, স্থানীয় জনপ্রতিনিধিবৃন্দ এবং বিভিন্ন এনজিও বন্যা কবলিত এলাকার বন্যা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষন করছেন এবং ত্রান সামগ্রি বিতরনসহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিচ্ছেন।রংপুরের বিভাগীয় কমিশনার মুহাম্মদ দিলাওয়ার বখত সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসকদের সাথে সমন্বয় করছেন, অন্যদিকে পানি উন্নয়ন বোর্ড ও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা বিভিন্ন উপদ্রুত এলাকা পরিদর্শন করছেন।কুড়িগ্রামের ত্রান ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা আবদুল মোতালিব, গাইবান্ধার হাবিবুর রহমান এবং আবদুস সালাম জানান, বন্যা দুর্গতদের মাঝে চাল ও নগদ অর্থ বিতরন করা হচ্ছে।
এদিকে, পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে আজ সকাল ৬টায়, যমুনা নদী বাহাদুরাবাদ, সারিয়াকান্দি ও সিরাজগঞ্জে বিপদসীমার যথাক্রমে ১৫ সেমি, ৯ সেমি ও ৭ সেমি উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। আর ধরলা নদী কুড়িগ্রাম পয়েন্টে বিপদসীমার ২০ সেমি উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। অন্যদিকে, আজ তিস্তার পানি ডালিয়া ৫ সেমি কমলেও তা বিপদসীমার ২৫ সেমি উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। উজান থেকে নেমে আসা জলরাশি ব্রক্ষপুত্র নদ ফুলছড়ি ও চিলমারী পয়েন্টে যথাক্রমে বিপদসীমার ৫ সেমি এবং ৩ সেমি উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। আত্রাই নদী বাঘাবাড়ি পয়েন্টে বিপদ সীমার ১৩৪ সেমি উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল।জামালপুর: যমুনা নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় জামালপুর জেলার সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে।সরিষাবাড়ি উপজেলায় বাসুরিয়া এবং ইসলামপুরের বেলগাছায় নদীর ভাঙ্গন ব্যাপক আকার ধারণ করেছে। ইসলামপুর, দেওয়ানগঞ্জ, বকশিগঞ্জ, মাদারগঞ্জ, মেলান্দহ, সদর এবং সরিষাবাড়ি উপজলায় এক লাখ ৪৬ হাজার ৩৪০ জন বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।পানি উন্নয়ন বোর্ড অফিস সূত্র জানায়, আজ দুপুর ১২টা পর্যন্ত বাহাদুরাবাদ ঘাট পয়েন্টে যমুনার পানি বিপদসীমার ১৯ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। গত ২৪ ঘন্টায় পানি বেড়েছে ১৬ সেন্টিমিটার। উজান থেকে ঢল নামায় এবং অব্যাহত বৃষ্টিপাতের ফলে পানি আরো বাড়বে বলে ধারণা করা হচ্ছে।হবিগঞ্জ : জেলার নদীগুলোতে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। টানা বৃষ্টিপাত ও উজান থেকে আসা ঢলে নদীর এ অবস্থা সৃষ্টি হচ্ছে। এদিকে কুশিয়ারা নদীর পানি বৃদ্ধির ফলে প্লাবিত এলাকাগুলোর পরিবারের লোকজন চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন। কুশিয়ার নদীর বাঁধ ভেঙ্গে বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হওয়ার আশংকায় লোকজন রাত জেগে বাঁধ পাহাড়া দিচ্ছেন।হবিগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী সৈয়দ সহিদুল আলম জানান, বুধবার খোয়াই নদীর পানি বেড়ে ৮ দশমিক ২০ মিটার থেকে ৮ দশমিক ৬ মিটার এবং কুশিয়ার নদীর পানি ৮ দশমিক ৭৪ মিটার থেকে ৮ দশমিক ৮২ মিটার বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকলে ও উজান থেকে ঢল নামলে এ অবস্থার আরো খারাপ হতে পারে। তিনি জানান, নদীর পানি বৃদ্ধির বিষয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ড সজাগ দৃষ্টি রাখছে। প্রয়োজনীয় সকল পরিস্থিতি মোকাবেলায় প্রস্তুতি রয়েছে।বগুড়া : বন্যার পানি কমতে না কমতেই গত মঙ্গলবারের প্রবল বর্ষণে ও উজান থেকে নেমে আসা ঢলে জেলার সারিয়াকান্দিতে যমুনার পানি বৃদ্ধি পেয়ে নতুন করে বন্যা দেখা দিয়েছে। গত সোমবার বন্যার পানি কমে বিপদসীমার ৮ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। মঙ্গলবারের বর্ষণে যমুনার পানি ১৯ সেন্টিমিটার পানি বৃদ্ধি পেয়ে আজ বুধবার সকালে তা ২৭ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। এতে সারিয়াকান্দি উপজেলার চালুয়াবাড়ি, কাজলা, কর্ণিবাড়ি, বোহাইল, চন্দনবাইশা, হাটশেরপুর, কুতুবপুর, ও সদর এলাকা পুনরায় প্লাবিত হয়েছে।জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, বন্যা দুর্গত এলাকায় ত্রাণ হিসেবে এ পর্যন্ত ৭০ মেট্রিক টন চাল ও ৫ লাখ ৭৫ হাজার টাকা বিতরণ করা হয়েছে। এর মধ্যে গতকাল মঙ্গলবার জেলার আদমদীঘি ও শিবগঞ্জ উপজেলায় ১০ মেট্রিক টন করে চাল বিতরণ করা হয়েছে।সিলেট : সিলেটের নদ-নদী ও হাওরাঞ্চলে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত হয়েছে। বিপদসীমা অতিক্রম করেছে সুরমা, কুশিয়ারার পানি। পুরো বিভাগ জুড়ে দেখা দিয়েছে বন্যা। গত তিনদিনের মুষলধারার বৃষ্টিতে বন্যা পরিস্থিতির আরো অবনতি হয়েছে। ফলে প্লাবিত হচ্ছে নতুন নতুন এলাকা।এতে ফসলি জমি ও বীজতলা তলিয়ে গেছে। রাস্তাঘাট, হাটবাজার, ঘরবাড়িতে পানি উঠেছে। বন্ধ হয়ে গেছে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। বিশেষ করে নিম্নাঞ্চলের হাজার হাজার মানুষ পানিবন্দি অবস্থায় মানবেতর জীবনযাপন করছেন। বেকার হয়ে পড়েছেন কর্মজীবী মানুষ। বন্ধ হয়ে গেছে অসংখ্য ব্যবসা প্রতিষ্ঠান।সিলেট পানি উন্নয়ন বোর্ড জানিয়েছে, প্রবল বৃষ্টি ও পাহাড়ি অঞ্চল থেকে নেমে আসা ঢলের কারণে পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। সোমবার থেকে সুরমা ও কুশিয়ারা নদীর পানি সবক’টি পয়েন্টে বিপদসীমার ওপরে অবস্থান করছে। মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৬টায় সুরমা নদীর পানি কানাইঘাট পয়েন্টে ১ দশমিক ৬৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। এই পয়েন্টে বিপদসীমা ১৩ দশমিক ২০ সেন্টিমিটার। অনেক আগেই বিপদসীমা অতিক্রম করেছে।একই নদীর সুনামগঞ্জ পয়েন্টে পানি উন্নয়ন বোর্ড সন্ধ্যায় ৮ দশমিক ৮১ সেন্টিমিটার লেভেল রেকর্ড করেছে। এই পয়েন্টে বিপদসীমা ৮ দশমিক ২৫ সেন্টেমিটার। যদিও সকাল থেকে এ পয়েন্টে পানি কমছে। ভোর ৬টায় এখানে পানির লেভেল ছিল ৮ দশমিক ৮৭ সেন্টিমিটার।জৈন্তাপুর, কোম্পানীগঞ্জ ও গোয়াইনঘাট উপজেলায় পাহাড়ী ঢল আর অবিরাম বৃষ্টিতে বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়েছে। অধিকাংশ এলাকার মানুষ পানিবন্দী রয়েছেন। উপজেলা সদরের সাথে যোগাযোগ প্রায় বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। 
কয়েক হাজার হেক্টর জমির আমন ও আউশ ইরি ক্ষেতের ব্যাপক ক্ষতি দেখা দিয়েছে।ঢাকা : টানা বর্ষণে পদ্মা নদীর অব্যাহত পানি বৃদ্ধিতে ঢাকা জেলার দোহার উপজেলায় ৬টি ইউনিয়ন ও নবাবগঞ্জ উপজেলার ২টি ইউনিয়নের চরাঞ্চল ও নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। এতে দূর্ভোগে পড়েছে এ অঞ্চলের অর্ধলক্ষাধিক মানুষ। অন্যদিকে, বিশুদ্ধ পানির সংকটে নানা পানি বাহিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছে বন্যা কবলিত মানুষ। পানি বন্দী এলাকায় কোন ত্রাণ এখনও পৌঁছেনি বলে এলাকাবাসী জানিয়েছেন।বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র শ্রীনগরের ভাগ্যকুল রেঞ্জ সূত্রে জানা গেছে, গত ২৪ ঘন্টায় পদ্মা নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে বুধবার সকাল ১০টা পর্যন্ত বিপদ সীমার ১০ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তবে বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের পূর্বাভাসে জানা গেছে, আগামীকাল বৃহস্পতিবারের পর থেকে পানি আরো ১০/১১ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেতে পারে।দোহার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নুরুল করিম ভূইয়া বলেন, বন্যা দূর্গতদের জন্য ত্রাণ বরাদ্ধ চেয়ে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।সমুদ্র বন্দরে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্কতা সংকেত: আবহাওয়া অধিদপ্তরের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, মৌসুমী বায়ু সক্রিয় হওয়ার কারণে উত্তর বঙ্গোপসাগর এলাকায় গভীর সঞ্চালনশীল মেঘমালা তৈরি হচ্ছে। এর প্রভাবে উত্তর বঙ্গোপসাগরে ও তৎসংলগ্ন বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকায় এবং সমুদ্র বন্দরসমূহের ওপর দিয়ে ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে।চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দরসমূহকে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্কতা সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। উত্তর বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারসমূহকে পরবর্তীতে নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত উপকূলের কাছাকাছি এসে সাবধানে চলাচল করতে বলা হয়েছে। 
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক সুভাষ চন্দ্র দেবনাথ জানান, বন্যায় চরাঞ্চলের প্রায় ৪০০ হেক্টর জমির আমন খেত পানিতে তলিয়ে গেছে।

বগুড়া : বগুড়ার সারিয়াকান্দিতে বন্যার পরিস্থিতির অবনতি অব্যাহত রয়েছে। বন্যানিয়ন্ত্রণ বাঁধের আরো ৫০০ মিটার নদীগর্ভে বিলীন হওয়ার পর প্লাবিত হচ্ছে নতুন নতুন এলাকা। সারিয়াকান্দি, ধুনট, সোনাতলা, শাজাহানপুর এবং গাবতলী এই- পাঁচ উপজেলার দুই শতাধিক গ্রাম প্লাবিত হয়েছে।বিপৎসীমার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহ অব্যাহত রয়েছে। মানবেতর জীবন কাটাচ্ছেন অন্তত দুই লাখেরও বেশি পানিবন্দি মানুষ। খোলা আকাশের নিচে দিন যাপন করছেন অনেকেই।

সারিয়াকান্দি উপজেলার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা প্রত্যয় হাসান জানান, সারিয়াকান্দিতে এ পর্যন্ত ৪৭ হাজার পরিবার পানিবন্দি রয়েছে। লক্ষাধিক মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত আর পানির নিচে নিমজ্জিত রয়েছে ১০ লাখ হেক্টর আবাদি জমি। ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য আশ্রয়ণ কেন্দ্র খোলা হয়েছে বলেও জানান তিনি। সোনাতলা উপজেলা নির্বাহী অফিসার ফিরাজুল ইসলাম জানান, এই উপজেলায় ২৬টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। সাড়ে আট হাজার পরিবার পানিবন্দি এবং এখানে পানির নিচে নিমজ্জিত ১০ হাজার ৩৫ হেক্টর আবাদি জমি।ধুনট উপজেলা নির্বাহী অফিসার জানান, ধুনট পৌর এলাকা ও সদরসহ ৫০টি গ্রামে পানি প্রবেশ করেছে। লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি। ছোট-বড় সব জলাশয় তলিয়ে গেছে।এ ছাড়া গাবতলী ও শাজাহানপুরের ২০টি গ্রামে নতুন করে পানি ঢুকতে শুরু করেছে।পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী নুরুল ইসলাম সরকার জানান, এখনো উজানের পাহাড়ি ঢল যমুনায় প্রবেশ করছে। ফলে পরিস্থিতির অবনতি ঘটছে। তবে দু-এক দিনে মধ্যে কিছুটা উন্নতির সম্ভাবনা রয়েছে।

জামালপুর : জামালপুরের সার্বিক বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত রয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় যমুনার পানি কিছুটা কমলেও আজ সোমবার সকালে বিপৎসীমার ৩০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।টানা ১৫ দিন ধরে বিপৎসীমার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হওয়ায় দুর্গত এলাকায় কাজ ও খাদ্যের তীব্র সংকট চলছে। দুর্গত এলাকায় ছড়িয়ে পড়ছে পানিবাহিত রোগ।
জামালপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. আবুল কাসেম জানিয়েছেন, জেলার প্রায় ৩৪ হাজার হেক্টর জমির ফসল পানিতে নিমজ্জিত আছে। এর মধ্যে শুধু রোপা আপন হলো ৩২ হাজার হেক্টর। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে জেলার প্রায় দুই লাখ ৩০ হাজার কৃষক। বন্যার ক্ষতি পুষিয়ে নিতে আগামী রবি মৌসুমে কৃষি পুনর্বাসন কর্মসূচির আওতায় ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের সহায়তা করা হবে বলে তিনি জানান।জেলা মৎস্য কর্মকর্তা রণজিৎ কুমার পাল জানান, জেলার প্রায় আড়াই হাজার পুকুর বন্যার পানিতে ভেসে গেছে। এতে কী পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, তা জানার জন্য মৎস্য বিভাগ তথ্য সংগ্রহ করছে।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এর জীবনী ( Life of Rabindranath Tagore) | Teach-Bangla


রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ছিলেন অগ্রণী বাঙালি কবি, ঔপন্যাসিক, সংগীতস্রষ্টা, নাট্যকার, চিত্রকর, ছোটগল্পকার, প্রাবন্ধিক, অভিনেতা, কণ্ঠশিল্পী ও দার্শনিক। তাঁকে বাংলা ভাষার সর্বশ্রেষ্ঠ সাহিত্যিক মনে করা হয়। রবীন্দ্রনাথকে গুরুদেব, কবিগুরু ও বিশ্বকবি অভিধায় ভূষিত করা হয়। রবীন্দ্রনাথের ৫২টি কাব্যগ্রন্থ, ৩৮টি নাটক, ১৩টি উপন্যাস ও ৩৬টি প্রবন্ধ ও অন্যান্য গদ্যসংকলন তাঁর জীবদ্দশায় বা মৃত্যুর অব্যবহিত পরে প্রকাশিত হয়। তাঁর সর্বমোট ৯৫টি ছোটগল্প ও ১৯১৫টি গান যথাক্রমে গল্পগুচ্ছ ও গীতবিতান সংকলনের অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। রবীন্দ্রনাথের যাবতীয় প্রকাশিত ও গ্রন্থাকারে অপ্রকাশিত রচনা ৩২ খণ্ডে রবীন্দ্র রচনাবলী নামে প্রকাশিত হয়েছে। রবীন্দ্রনাথের যাবতীয় পত্রসাহিত্য উনিশ খণ্ডে চিঠিপত্র ও চারটি পৃথক গ্রন্থে প্রকাশিত। এছাড়া তিনি প্রায় দুই হাজার ছবি এঁকেছিলেন। রবীন্দ্রনাথের রচনা বিশ্বের বিভিন্ন ভাষায় অনূদিত হয়েছে। ১৯১৩ সালে গীতাঞ্জলি কাব্যগ্রন্থের ইংরেজি অনুবাদের জন্য তিনি সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন।

       রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এর জীবনী :          

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (১৮৬১ - ৭ই আগস্ট, ১৯৪১) (২৫ বৈশাখ, ১২৬৮ - ২২ শ্রাবণ, ১৩৪৮ বঙ্গাব্দ) ছিলেন অগ্রণী বাঙালি কবি, ঔপন্যাসিক, সংগীতস্রষ্টা, নাট্যকার, চিত্রকর, ছোটগল্পকার, প্রাবন্ধিক, অভিনেতা, কণ্ঠশিল্পী ও দার্শনিক। তাঁকে বাংলা ভাষার সর্বশ্রেষ্ঠ সাহিত্যিক মনে করা হয়। রবীন্দ্রনাথকে গুরুদেব, কবিগুরুবিশ্বকবি অভিধায় ভূষিত করা হয়। রবীন্দ্রনাথের ৫২টি কাব্যগ্রন্থ, ৩৮টি নাটক, ১৩টি উপন্যাস ও ৩৬টি প্রবন্ধ ও অন্যান্য গদ্যসংকলন তাঁর জীবদ্দশায় বা মৃত্যুর অব্যবহিত পরে প্রকাশিত হয়। তাঁর সর্বমোট ৯৫টি ছোটগল্প ও ১৯১৫টি গান যথাক্রমে গল্পগুচ্ছগীতবিতান সংকলনের অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। রবীন্দ্রনাথের যাবতীয় প্রকাশিত ও গ্রন্থাকারে অপ্রকাশিত রচনা ৩২ খণ্ডে রবীন্দ্র রচনাবলী নামে প্রকাশিত হয়েছে। রবীন্দ্রনাথের যাবতীয় পত্রসাহিত্য উনিশ খণ্ডে চিঠিপত্র ও চারটি পৃথক গ্রন্থে প্রকাশিত। এছাড়া তিনি প্রায় দুই হাজার ছবি এঁকেছিলেন। রবীন্দ্রনাথের রচনা বিশ্বের বিভিন্ন ভাষায় অনূদিত হয়েছে। ১৯১৩ সালে গীতাঞ্জলি কাব্যগ্রন্থের ইংরেজি অনুবাদের জন্য তিনি সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কলকাতার এক ধনাঢ্য ও সংস্কৃতিবান ব্রাহ্ম পিরালী ব্রাহ্মণ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। বাল্যকালে প্রথাগত বিদ্যালয়-শিক্ষা তিনি গ্রহণ করেননি; গৃহশিক্ষক রেখে বাড়িতেই তাঁর শিক্ষার ব্যবস্থা করা হয়েছিল। আট বছর বয়সে তিনি কবিতা লেখা শুরু করেন। ১৮৭৪ সালে তত্ত্ববোধিনী পত্রিকা-এ তাঁর "অভিলাষ" কবিতাটি প্রকাশিত হয়। এটিই ছিল তাঁর প্রথম প্রকাশিত রচনা। ১৮৭৮ সালে মাত্র সতেরো বছর বয়সে রবীন্দ্রনাথ প্রথমবার ইংল্যান্ডে যান। ১৮৮৩ সালে মৃণালিনী দেবীর সঙ্গে তাঁর বিবাহ হয়। ১৮৯০ সাল থেকে রবীন্দ্রনাথ পূর্ববঙ্গের শিলাইদহের জমিদারি এস্টেটে বসবাস শুরু করেন। ১৯০১ সালে তিনি পশ্চিমবঙ্গের শান্তিনিকেতনে ব্রহ্মচর্যাশ্রম প্রতিষ্ঠা করেন এবং সেখানেই পাকাপাকিভাবে বসবাস শুরু করেন। ১৯০২ সালে তাঁর পত্নীবিয়োগ হয়। ১৯০৫ সালে তিনি বঙ্গভঙ্গ-বিরোধী আন্দোলনে জড়িয়ে পড়েন। ১৯১৫ সালে ব্রিটিশ সরকার তাঁকে নাইট উপাধিতে ভূষিত করেন। কিন্তু ১৯১৯ সালে জালিয়ানওয়ালাবাগ হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে তিনি সেই উপাধি ত্যাগ করেন। ১৯২১ সালে গ্রামোন্নয়নের জন্য তিনি শ্রীনিকেতন নামে একটি সংস্থা প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯২৩ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে বিশ্বভারতী প্রতিষ্ঠিত হয়। দীর্ঘজীবনে তিনি বহুবার বিদেশ ভ্রমণ করেন এবং সমগ্র বিশ্বে বিশ্বভ্রাতৃত্বের বাণী প্রচার করেন। ১৯৪১ সালে দীর্ঘ রোগভোগের পর কলকাতার পৈত্রিক বাসভবনেই তাঁর মৃত্যু হয়।

রবীন্দ্রনাথের কাব্যসাহিত্যের বৈশিষ্ট্য ভাবগভীরতা, গীতিধর্মিতা চিত্ররূপময়তা, অধ্যাত্মচেতনা, ঐতিহ্যপ্রীতি, প্রকৃতিপ্রেম, মানবপ্রেম, স্বদেশপ্রেম, বিশ্বপ্রেম, রোম্যান্টিক সৌন্দর্যচেতনা, ভাব, ভাষা, ছন্দ ও আঙ্গিকের বৈচিত্র্য, বাস্তবচেতনা ও প্রগতিচেতনা। রবীন্দ্রনাথের গদ্যভাষাও কাব্যিক। ভারতের ধ্রুপদি ও লৌকিক সংস্কৃতি এবং পাশ্চাত্য বিজ্ঞানচেতনা ও শিল্পদর্শন তাঁর রচনায় গভীর প্রভাব বিস্তার করেছিল। কথাসাহিত্য ও প্রবন্ধের মাধ্যমে তিনি সমাজ, রাজনীতি ও রাষ্ট্রনীতি সম্পর্কে নিজ মতামত প্রকাশ করেছিলেন। সমাজকল্যাণের উপায় হিসেবে তিনি গ্রামোন্নয়ন ও গ্রামের দরিদ্র জনসাধারণকে শিক্ষিত করে তোলার পক্ষে মতপ্রকাশ করেন। এর পাশাপাশি সামাজিক ভেদাভেদ, অস্পৃশ্যতা, ধর্মীয় গোঁড়ামি ও ধর্মান্ধতার বিরুদ্ধেও তিনি তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন। রবীন্দ্রনাথের দর্শনচেতনায় ঈশ্বরের মূল হিসেবে মানব সংসারকেই নির্দিষ্ট করা হয়েছে; রবীন্দ্রনাথ দেববিগ্রহের পরিবর্তে কর্মী অর্থাৎ মানুষ ঈশ্বরের পূজার কথা বলেছিলেন। সংগীত ও নৃত্যকে তিনি শিক্ষার অপরিহার্য অঙ্গ মনে করতেন। রবীন্দ্রনাথের গান তাঁর অন্যতম শ্রেষ্ঠ কীর্তি। তাঁর রচিত আমার সোনার বাংলাজনগণমন-অধিনায়ক জয় হে গানদুটি যথাক্রমে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ ও ভারতীয় প্রজাতন্ত্রের জাতীয় সংগীত।
 শৈশব ও কৈশোর (১৮৬১ - ১৮৭৮)

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কলকাতার জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়িতে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। তাঁর পিতা ছিলেন ব্রাহ্ম ধর্মগুরু দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর (১৮১৭–১৯০৫) এবং মাতা ছিলেন সারদাসুন্দরী দেবী (১৮২৬–১৮৭৫)।. রবীন্দ্রনাথ ছিলেন পিতামাতার চতুর্দশ সন্তান। জোড়াসাঁকোর ঠাকুর পরিবার ছিল ব্রাহ্ম আদিধর্ম মতবাদের প্রবক্তা। রবীন্দ্রনাথের পূর্ব পুরুষেরা খুলনা জেলার রূপসা উপজেলা পিঠাভোগে বাস করতেন। ১৮৭৫ সালে মাত্র চোদ্দ বছর বয়সে রবীন্দ্রনাথের মাতৃবিয়োগ ঘটে। পিতা দেবেন্দ্রনাথ দেশভ্রমণের নেশায় বছরের অধিকাংশ সময় কলকাতার বাইরে অতিবাহিত করতেন। তাই ধনাঢ্য পরিবারের সন্তান হয়েও রবীন্দ্রনাথের ছেলেবেলা কেটেছিল ভৃত্যদের অনুশাসনে। শৈশবে রবীন্দ্রনাথ কলকাতার ওরিয়েন্টাল সেমিনারি, নর্ম্যাল স্কুল, বেঙ্গল অ্যাকাডেমি এবং সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজিয়েট স্কুলে কিছুদিন করে পড়াশোনা করেছিলেন। কিন্তু বিদ্যালয়-শিক্ষায় অনাগ্রহী হওয়ায় বাড়িতেই গৃহশিক্ষক রেখে তাঁর শিক্ষার ব্যবস্থা করা হয়েছিল। ছেলেবেলায় জোড়াসাঁকোর বাড়িতে অথবা বোলপুর ও পানিহাটির বাগানবাড়িতে প্রাকৃতিক পরিবেশের মধ্যে ঘুরে বেড়াতে বেশি স্বচ্ছন্দবোধ করতেন রবীন্দ্রনাথ। ১৮৭৩ সালে এগারো বছর বয়সে রবীন্দ্রনাথের উপনয়ন অনুষ্ঠিত হয়েছিল। এরপর তিনি কয়েক মাসের জন্য পিতার সঙ্গে দেশভ্রমণে বের হন। প্রথমে তাঁরা আসেন শান্তিনিকেতনে। এরপর পাঞ্জাবের অমৃতসরে কিছুকাল কাটিয়ে শিখদের উপাসনা পদ্ধতি পরিদর্শন করেন। শেষে পুত্রকে নিয়ে দেবেন্দ্রনাথ যান পাঞ্জাবেরই (অধুনা ভারতের হিমাচল প্রদেশ রাজ্যে অবস্থিত) ডালহৌসি শৈলশহরের নিকট বক্রোটায়। এখানকার বক্রোটা বাংলোয় বসে রবীন্দ্রনাথ পিতার কাছ থেকে সংস্কৃত ব্যাকরণ, ইংরেজি, জ্যোতির্বিজ্ঞান, সাধারণ বিজ্ঞান ও ইতিহাসের নিয়মিত পাঠ নিতে শুরু করেন। দেবেন্দ্রনাথ তাঁকে বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গের জীবনী, কালিদাস রচিত ধ্রুপদি সংস্কৃত কাব্য ও নাটক এবং উপনিষদ্‌ পাঠেও উৎসাহিত করতেন। ১৮৭৭ সালে ভারতী পত্রিকায় তরুণ রবীন্দ্রনাথের কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ রচনা প্রকাশিত হয়। এগুলি হল মাইকেল মধুসূদনের "মেঘনাদবধ কাব্যের সমালোচনা", ভানুসিংহ ঠাকুরের পদাবলী এবং "ভিখারিণী" ও "করুণা" নামে দুটি গল্প। এর মধ্যে ভানুসিংহ ঠাকুরের পদাবলী বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। এই কবিতাগুলি রাধা-কৃষ্ণ বিষয়ক পদাবলির অনুকরণে "ভানুসিংহ" ভণিতায় রচিত। রবীন্দ্রনাথের "ভিখারিণী" গল্পটি (১৮৭৭) বাংলা সাহিত্যের প্রথম ছোটগল্প। ১৮৭৮ সালে প্রকাশিত হয় রবীন্দ্রনাথের প্রথম কাব্যগ্রন্থ তথা প্রথম মুদ্রিত গ্রন্থ কবিকাহিনী। এছাড়া এই পর্বে তিনি রচনা করেছিলেন সন্ধ্যাসংগীত (১৮৮২) কাব্যগ্রন্থটি। রবীন্দ্রনাথের বিখ্যাত কবিতা "নির্ঝরের স্বপ্নভঙ্গ" এই কাব্যগ্রন্থের অন্তর্গত।
যৌবন (১৮৭৮-১৯০১)

১৮৭৮ সালে ব্যারিস্টারি পড়ার উদ্দেশ্যে ইংল্যান্ডে যান রবীন্দ্রনাথ। প্রথমে তিনি ব্রাইটনের একটি পাবলিক স্কুলে ভর্তি হয়েছিলেন। ১৮৭৯ সালে ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডনে আইনবিদ্যা নিয়ে পড়াশোনা শুরু করেন। কিন্তু সাহিত্যচর্চার আকর্ষণে সেই পড়াশোনা তিনি সমাপ্ত করতে পারেননি। ইংল্যান্ডে থাকাকালীন শেকসপিয়র ও অন্যান্য ইংরেজ সাহিত্যিকদের রচনার সঙ্গে রবীন্দ্রনাথের পরিচয় ঘটে। এই সময় তিনি বিশেষ মনোযোগ সহকারে পাঠ করেন রিলিজিও মেদিচি, কোরিওলেনাস এবং অ্যান্টনি অ্যান্ড ক্লিওপেট্রা। এই সময় তাঁর ইংল্যান্ডবাসের অভিজ্ঞতার কথা ভারতী পত্রিকায় পত্রাকারে পাঠাতেন রবীন্দ্রনাথ। উক্ত পত্রিকায় এই লেখাগুলি জ্যেষ্ঠভ্রাতা দ্বিজেন্দ্রনাথ ঠাকুরের সমালোচনাসহ প্রকাশিত হত য়ুরোপযাত্রী কোনো বঙ্গীয় যুবকের পত্রধারা নামে। ১৮৮১ সালে সেই পত্রাবলি য়ুরোপ-প্রবাসীর পত্র নামে গ্রন্থাকারে ছাপা হয়। এটিই ছিল রবীন্দ্রনাথের প্রথম গদ্যগ্রন্থ তথা প্রথম চলিত ভাষায় লেখা গ্রন্থ। অবশেষে ১৮৮০ সালে প্রায় দেড় বছর ইংল্যান্ডে কাটিয়ে কোনো ডিগ্রি না নিয়ে এবং ব্যারিস্টারি পড়া শুরু না করেই তিনি দেশে ফিরে আসেন।১৮৮৩ সালের ৯ ডিসেম্বর (২৪ অগ্রহায়ণ, ১২৯০ বঙ্গাব্দ) ঠাকুরবাড়ির অধস্তন কর্মচারী বেণীমাধব রায়চৌধুরীর কন্যা ভবতারিণীর সঙ্গে রবীন্দ্রনাথের বিবাহ সম্পন্ন হয়। বিবাহিত জীবনে ভবতারিণীর নামকরণ হয়েছিল মৃণালিনী দেবী (১৮৭৩–১৯০২ )।. রবীন্দ্রনাথ ও মৃণালিনীর সন্তান ছিলেন পাঁচ জন: মাধুরীলতা (১৮৮৬–১৯১৮), রথীন্দ্রনাথ (১৮৮৮–১৯৬১), রেণুকা (১৮৯১–১৯০৩), মীরা (১৮৯৪–১৯৬৯) এবং শমীন্দ্রনাথ (১৮৯৬–১৯০৭)।. এঁদের মধ্যে অতি অল্প বয়সেই রেণুকা ও শমীন্দ্রনাথের মৃত্যু ঘটে।১৮৯১ সাল থেকে পিতার আদেশে নদিয়া (নদিয়ার উক্ত অংশটি অধুনা বাংলাদেশের কুষ্টিয়া জেলা), পাবনা ও রাজশাহী জেলা এবং উড়িষ্যার জমিদারিগুলির তদারকি শুরু করেন রবীন্দ্রনাথ। কুষ্টিয়ার শিলাইদহের কুঠিবাড়িতে রবীন্দ্রনাথ দীর্ঘ সময় অতিবাহিত করেছিলেন। জমিদার রবীন্দ্রনাথ শিলাইদহে "পদ্মা" নামে একটি বিলাসবহুল পারিবারিক বজরায় চড়ে প্রজাবর্গের কাছে খাজনা আদায় ও আশীর্বাদ প্রার্থনা করতে যেতেন। গ্রামবাসীরাও তাঁর সম্মানে ভোজসভার আয়োজন করত।১৮৯০ সালে রবীন্দ্রনাথের অপর বিখ্যাত কাব্যগ্রন্থ মানসী প্রকাশিত হয়। কুড়ি থেকে ত্রিশ বছর বয়সের মধ্যে তাঁর আরও কয়েকটি উল্লেখযোগ্য কাব্যগ্রন্থ ও গীতিসংকলন প্রকাশিত হয়েছিল। এগুলি হলো প্রভাতসংগীত, শৈশবসঙ্গীত, রবিচ্ছায়া, কড়ি ও কোমল ইত্যাদি। ১৮৯১ থেকে ১৮৯৫ সাল পর্যন্ত নিজের সম্পাদিত সাধনা পত্রিকায় রবীন্দ্রনাথের বেশ কিছু উৎকৃষ্ট রচনা প্রকাশিত হয়। তাঁর সাহিত্যজীবনের এই পর্যায়টি তাই "সাধনা পর্যায়" নামে পরিচিত। রবীন্দ্রনাথের গল্পগুচ্ছ গ্রন্থের প্রথম চুরাশিটি গল্পের অর্ধেকই এই পর্যায়ের রচনা। এই ছোটগল্পগুলিতে তিনি বাংলার গ্রামীণ জনজীবনের এক আবেগময় ও শ্লেষাত্মক চিত্র এঁকেছিলেন।
 মধ্য জীবন (১৯০১–১৯৩২)

১৯০১ সালে রবীন্দ্রনাথ সপরিবারে শিলাইদহ ছেড়ে চলে আসেন বীরভূম জেলার বোলপুর শহরের উপকণ্ঠে শান্তিনিকেতনে। এখানে দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর ১৮৮৮ সালে একটি আশ্রম ও ১৮৯১ সালে একটি ব্রহ্মমন্দির প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। আশ্রমের আম্রকুঞ্জ উদ্যানে একটি গ্রন্থাগার নিয়ে রবীন্দ্রনাথ চালু করলেন “ব্রহ্মবিদ্যালয়” বা “ব্রহ্মচর্যাশ্র” নামে একটি পরীক্ষামূলক স্কুল। ১৯০২ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর মাত্র ত্রিশ বছর বয়সে কবিপত্নী মৃণালিনী দেবী মারা যান। এরপর ১৯০৩ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর কন্যা রেণুকা, ১৯০৫ সালের ১৯ জানুয়ারি পিতা দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর ও ১৯০৭ সালের ২৩ নভেম্বর কনিষ্ঠ পুত্র শমীন্দ্রনাথের মৃত্যু হয়।এসবের মধ্যেই ১৯০৫ সালে রবীন্দ্রনাথ বঙ্গভঙ্গ-বিরোধী স্বদেশী আন্দোলনের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছিলেন। ১৯০৬ সালে রবীন্দ্রনাথ তাঁর জ্যেষ্ঠপুত্র রথীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে পাঠান আধুনিক কৃষি ও গোপালন বিদ্যা শেখার জন্য। ১৯০৭ সালে কনিষ্ঠা জামাতা নগেন্দ্রনাথ গঙ্গোপাধ্যায়কেও কৃষিবিজ্ঞান শেখার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে পাঠিয়েছিলেন রবীন্দ্রনাথ।এই সময় শান্তিনিকেতনের ব্রহ্মবিদ্যালয়ে অর্থসংকট তীব্র হয়ে ওঠে। পাশাপাশি পুত্র ও জামাতার বিদেশে পড়াশোনার ব্যয়ভারও রবীন্দ্রনাথকে বহন করতে হয়। এমতাবস্থায় রবীন্দ্রনাথ স্ত্রীর গয়না ও পুরীর বসতবাড়িটি বিক্রি করে দিতে বাধ্য হন।ইতোমধ্যেই অবশ্য বাংলা ও বহির্বঙ্গে রবীন্দ্রনাথের কবিখ্যাতি ছড়িয়ে পড়েছিল। ১৯০১ সালে নৈবেদ্য ও ১৯০৬ সালে খেয়া কাব্যগ্রন্থের পর ১৯১০ সালে তাঁর বিখ্যাত কাব্যগ্রন্থ গীতাঞ্জলি প্রকাশিত হয়। ১৯১৩ সালে গীতাঞ্জলি (ইংরেজি অনুবাদ, ১৯১২) কাব্যগ্রন্থের ইংরেজি অনুবাদের জন্য সুইডিশ অ্যাকাডেমি রবীন্দ্রনাথকে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার প্রদান করে। ১৯১৫ সালে ব্রিটিশ সরকার তাঁকে ‘স্যার’ উপাধি (নাইটহুড) দেয়।১৯২১ সালে শান্তিনিকেতনের অদূরে সুরুল গ্রামে মার্কিন কৃষি-অর্থনীতিবিদ লেনার্ড নাইট এলমহার্স্ট, রথীন্দ্রনাথ ঠাকুর এবং শান্তিনিকেতনের আরও কয়েকজন শিক্ষক ও ছাত্রের সহায়তায় রবীন্দ্রনাথ “পল্লীসংগঠন কেন্দ্র” নামে একটি সংস্থা প্রতিষ্ঠা করেন। এই সংস্থার উদ্দেশ্য ছিল কৃষির উন্নতিসাধন, ম্যালেরিয়া ইত্যাদি রোগ নিবারণ, সমবায় প্রথায় ধর্মগোলা স্থাপন, চিকিৎসার সুব্যবস্থা এবং সাধারণ গ্রামবাসীদের মধ্যে স্বাস্থ্যসচেতনতা বৃদ্ধি করা। ১৯২৩ সালে রবীন্দ্রনাথ এই সংস্থার নাম পরিবর্তন করে রাখেন “শ্রীনিকেতন”।. শ্রীনিকেতন ছিল মহাত্মা গান্ধীর প্রতীক ও প্রতিবাদসর্বস্ব স্বরাজ আন্দোলনের একটি বিকল্প ব্যবস্থা। উল্লেখ্য, রবীন্দ্রনাথ, গান্ধীর আন্দোলনের পন্থা-বিরোধী ছিলেন। পরবর্তীকালে দেশ ও বিদেশের একাধিক বিশেষজ্ঞ, দাতা ও অন্যান্য পদাধিকারীরা শ্রীনিকেতনের জন্য আর্থিক ও অন্যান্য সাহায্য পাঠিয়েছিলেন।১৯৩০-এর দশকের প্রথম ভাগে একাধিক বক্তৃতা, গান ও কবিতায় রবীন্দ্রনাথ ভারতীয় সমাজের বর্ণাশ্রম প্রথা ও অস্পৃশ্যতার তীব্র সমালোচনা করেছিলেন।
 শেষ জীবন (১৯৩২-১৯৪১)

 জীবনের শেষ দশকে (১৯৩২-১৯৪১) রবীন্দ্রনাথের মোট পঞ্চাশটি গ্রন্থ প্রকাশিত হয়। তাঁর এই সময়কার কাব্যগ্রন্থগুলির মধ্যে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য পুনশ্চ (১৯৩২), শেষ সপ্তক (১৯৩৫), শ্যামলী ও পত্রপুট (১৯৩৬) – এই গদ্যকবিতা সংকলন তিনটি। জীবনের এই পর্বে সাহিত্যের নানা শাখায় পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালিয়েছিলেন রবীন্দ্রনাথ। তাঁর এই পরীক্ষা-নিরীক্ষার ফসল হলো তাঁর একাধিক গদ্যগীতিকা ও নৃত্যনাট্য চিত্রাঙ্গদা (১৯৩৬; চিত্রাঙ্গদা (১৮৯২) কাব্যনাট্যের নৃত্যাভিনয়-উপযোগী রূপ), শ্যামা (১৯৩৯) ও চণ্ডালিকা (১৯৩৯) নৃত্যনাট্যত্রয়ী। এছাড়া রবীন্দ্রনাথ তাঁর শেষ তিনটি উপন্যাসও (দুই বোন (১৯৩৩), মালঞ্চ (১৯৩৪) ও চার অধ্যায় (১৯৩৪)) এই পর্বে রচনা করেছিলেন। তাঁর অধিকাংশ ছবি জীবনের এই পর্বেই আঁকা। এর সঙ্গে সঙ্গে জীবনের শেষ বছরগুলিতে বিজ্ঞান বিষয়ে আগ্রহী হয়ে উঠেছিলেন রবীন্দ্রনাথ। ১৯৩৭ সালে প্রকাশিত হয় তাঁর বিজ্ঞান-বিষয়ক প্রবন্ধ সংকলন বিশ্বপরিচয়। এই গ্রন্থে তিনি জ্যোতির্বিজ্ঞানের আধুনিকতম সিদ্ধান্তগুলি সরল বাংলা গদ্যে লিপিবদ্ধ করেছিলেন। পদার্থবিদ্যা ও জ্যোতির্বিজ্ঞান সম্পর্কে তাঁর অর্জিত জ্ঞানের প্রভাব পরিলক্ষিত হয় তাঁর কাব্যেও। সে (১৯৩৭), তিন সঙ্গী (১৯৪০) ও গল্পসল্প (১৯৪১) গল্পসংকলন তিনটিতে তাঁর বিজ্ঞানী চরিত্র-কেন্দ্রিক একাধিক গল্প সংকলিত হয়েছে।জীবনের এই পর্বে ধর্মীয় গোঁড়ামি ও কুসংস্কারের বিরুদ্ধে তীব্রতম প্রতিক্রিয়া জানিয়েছিলেন রবীন্দ্রনাথ। ১৯৩৪ সালে ব্রিটিশ বিহার প্রদেশে ভূমিকম্পে শতাধিক মানুষের মৃত্যুকে গান্ধীজি "ঈশ্বরের রোষ" বলে অভিহিত করলে, রবীন্দ্রনাথ গান্ধীজির এহেন বক্তব্যকে অবৈজ্ঞানিক বলে চিহ্নিত করেন এবং প্রকাশ্যে তাঁর সমালোচনা করেন। কলকাতার সাধারণ মানুষের আর্থিক দুরবস্থা ও ব্রিটিশ বাংলা প্রদেশের দ্রুত আর্থসামাজিক অবক্ষয় তাঁকে বিশেষভাবে বিচলিত করে তুলেছিল। গদ্যছন্দে রচিত একটি শত-পংক্তির কবিতায় তিনি এই ঘটনা চিত্রায়িতও করেছিলেন।জীবনের শেষ চার বছর ছিল তাঁর ধারাবাহিক শারীরিক অসুস্থতার সময়। এই সময়ের মধ্যে দুইবার অত্যন্ত অসুস্থ অবস্থায় শয্যাশায়ী থাকতে হয়েছিল তাঁকে। ১৯৩৭ সালে একবার অচৈতন্য হয়ে গিয়ে আশঙ্কাজনক অবস্থা হয়েছিল কবির। সেবার সেরে উঠলেও ১৯৪০ সালে অসুস্থ হওয়ার পর আর তিনি সেরে উঠতে পারেননি। এই সময়পর্বে রচিত রবীন্দ্রনাথের কবিতাগুলি ছিল মৃত্যুচেতনাকে কেন্দ্র করে সৃজিত কিছু অবিস্মরণীয় পংক্তিমালা। মৃত্যুর সাত দিন আগে পর্যন্ত রবীন্দ্রনাথ সৃষ্টিশীল ছিলেন। দীর্ঘ রোগভোগের পর ১৯৪১ সালে জোড়াসাঁকোর বাসভবনেই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।

সৃষ্টিকর্ম


 

কবিতা

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর প্রথম জীবনে ছিলেন বিহারীলাল চক্রবর্তীর (১৮৩৫-১৮৯৪) অনুসারী কবি।[১২৩] তাঁর কবিকাহিনী, বনফুল ও ভগ্নহৃদয় কাব্য তিনটিতে বিহারীলালের প্রভাব সুস্পষ্ট। সন্ধ্যাসংগীত কাব্যগ্রন্থ থেকে রবীন্দ্রনাথ নিজের বক্তব্য প্রকাশ করতে শুরু করেন। এই পর্বের সন্ধ্যাসংগীত, প্রভাতসংগীত, ছবি ও গান ও কড়ি ও কোমল কাব্যগ্রন্থের মূল বিষয়বস্তু ছিল মানব হৃদয়ের বিষণ্ণতা, আনন্দ, মর্ত্যপ্রীতি ও মানবপ্রেম। ১৮৯০ সালে প্রকাশিত মানসী এবং তার পর প্রকাশিত সোনার তরী (১৮৯৪), চিত্রা (১৮৯৬), চৈতালি (১৮৯৬), কল্পনা (১৯০০) ও ক্ষণিকা (১৯০০) কাব্যগ্রন্থে ফুটে উঠেছে রবীন্দ্রনাথের প্রেম ও সৌন্দর্য সম্পর্কিত রোম্যান্টিক ভাবনা। ১৯০১ সালে ব্রহ্মচর্যাশ্রম প্রতিষ্ঠার পর রবীন্দ্রনাথের কবিতায় আধ্যাত্মিক চিন্তার প্রাধান্য লক্ষিত হয়। এই চিন্তা ধরা পড়েছে নৈবেদ্য (১৯০১), খেয়া (১৯০৬), গীতাঞ্জলি (১৯১০), গীতিমাল্য (১৯১৪) ও গীতালি (১৯১৪) কাব্যগ্রন্থে। ১৯১৫ সালে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সূচনা ঘটলে বলাকা (১৯১৬) কাব্যে রবীন্দ্রনাথের কবিতায় আধ্যাত্মিক চিন্তার পরিবর্তে আবার মর্ত্যজীবন সম্পর্কে আগ্রহ ফুটে ওঠে। পলাতকা (১৯১৮) কাব্যে গল্প-কবিতার আকারে তিনি নারীজীবনের সমসাময়িক সমস্যাগুলি তুলে ধরেন। পূরবী (১৯২৫) ও মহুয়া (১৯২৯) কাব্যগ্রন্থে রবীন্দ্রনাথ আবার প্রেমকে উপজীব্য করেন। এরপর পুনশ্চ (১৯৩২), শেষ সপ্তক (১৯৩৫), পত্রপুট (১৯৩৬) ও শ্যামলী (১৯৩৬) নামে চারটি গদ্যকাব্য প্রকাশিত হয়। জীবনের শেষ দশকে কবিতার আঙ্গিক ও বিষয়বস্তু নিয়ে কয়েকটি নতুন পরীক্ষানিরীক্ষা চালিয়েছিলেন রবীন্দ্রনাথ। এই সময়কার রোগশয্যায় (১৯৪০), আরোগ্য (১৯৪১), জন্মদিনে (১৯৪১) ও শেষ লেখা (১৯৪১, মরণোত্তর প্রকাশিত) কাব্যে মৃত্যু ও মর্ত্যপ্রীতিকে একটি নতুন আঙ্গিকে পরিস্ফুট করেছিলেন তিনি। শেষ কবিতা “তোমার সৃষ্টির পথ” মৃত্যুর আট দিন আগে মৌখিকভাবে রচনা করেছিলেন রবীন্দ্রনাথ। রবীন্দ্রনাথের কবিতায় মধ্যযুগীয় বৈষ্ণব পদাবলি, উপনিষদ্‌, কবীরের দোঁহাবলি, লালনের বাউল গান ও রামপ্রসাদ সেনের শাক্ত পদাবলি সাহিত্যের প্রভাব লক্ষিত হয়। তবে প্রাচীন সাহিত্যের দুরূহতার পরিবর্তে তিনি এক সহজ ও সরস কাব্যরচনার আঙ্গিক গ্রহণ করেছিলেন। আবার ১৯৩০-এর দশকে কিছু পরীক্ষামূলক লেখালেখির মাধ্যমে বাংলা সাহিত্যে আধুনিকতা ও বাস্তবতাবোধের প্রাথমিক আবির্ভাব প্রসঙ্গে নিজ প্রতিক্রিয়াও ব্যক্ত করেছিলেন কবি। বহির্বিশ্বে তাঁর সর্বাপেক্ষা সুপরিচিত কাব্যগ্রন্থটি হল গীতাঞ্জলি। এ বইটির জন্যই তিনি সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার লাভ করেছিলেন। নোবেল ফাউন্ডেশন তাঁর এই কাব্যগ্রন্থটিকে বর্ণনা করেছিল একটি “গভীরভাবে সংবেদনশীল, উজ্জ্বল ও সুন্দর কাব্যগ্রন্থ” রূপে।

ছোটগল্প

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ছিলেন বাংলা সাহিত্যের প্রথম সার্থক ছোটগল্পকার। মূলত হিতবাদী, সাধনা, ভারতী, সবুজ পত্র প্রভৃতি মাসিক পত্রিকাগুলির চাহিদা মেটাতে তিনি তাঁর ছোটগল্পগুলি রচনা করেছিলেন। এই গল্পগুলির উচ্চ সাহিত্যমূল্য-সম্পন্ন। রবীন্দ্রনাথের জীবনের “সাধনা” পর্বটি (১৮৯১–৯৫) ছিল সর্বাপেক্ষা সৃষ্টিশীল পর্যায়। তাঁর গল্পগুচ্ছ গল্পসংকলনের প্রথম তিন খণ্ডের চুরাশিটি গল্পের অর্ধেকই রচিত হয় এই সময়কালের মধ্যে। গল্পগুচ্ছ সংকলনের অন্য গল্পগুলির অনেকগুলিই রচিত হয়েছিল রবীন্দ্রজীবনের সবুজ পত্র পর্বে (১৯১৪–১৭; প্রমথ চৌধুরী সম্পাদিত পত্রিকার নামানুসারে) তাঁর উল্লেখযোগ্য কয়েকটি গল্প হল “কঙ্কাল”, “নিশীথে”, “মণিহারা”, “ক্ষুধিত পাষাণ”, “স্ত্রীর পত্র”, “নষ্টনীড়”, “কাবুলিওয়ালা”, “হৈমন্তী”, “দেনাপাওনা”, “মুসলমানীর গল্প” ইত্যাদি। শেষ জীবনে রবীন্দ্রনাথ লিপিকা, সে ও তিনসঙ্গী গল্পগ্রন্থে নতুন আঙ্গিকে গল্পরচনা করেছিলেন।
রবীন্দ্রনাথ তাঁর গল্পে পারিপার্শ্বিক ঘটনাবলি বা আধুনিক ধ্যানধারণা সম্পর্কে মতামত প্রকাশ করতেন। কখনও তিনি মনস্তাত্ত্বিক দ্বন্দ্বের বৌদ্ধিক বিশ্লেষণকেই গল্পে বেশি প্রাধান্য দিতেন।
রবীন্দ্রনাথের একাধিক ছোটগল্প অবলম্বনে চলচ্চিত্র, নাটক ও টেলিভিশন অনুষ্ঠান নির্মিত হয়েছে। তাঁর গল্পের কয়েকটি উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্রায়ণ হল সত্যজিৎ রায় পরিচালিত তিন কন্যা (“মনিহারা”, “পোস্টমাস্টার” ও “সমাপ্তি” অবলম্বনে) ও চারুলতা (“নষ্টনীড়” অবলম্বনে) , তপন সিংহ পরিচালিত অতিথি, কাবুলিওয়ালা ও ক্ষুধিত পাষাণ, পূর্ণেন্দু পত্রী পরিচালিত স্ত্রীর পত্র ইত্যাদি।

উপন্যাস

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর মোট তেরোটি উপন্যাস রচনা করেছিলেন। এগুলি হল: বৌ-ঠাকুরাণীর হাট (১৮৮৩), রাজর্ষি (১৮৮৭), চোখের বালি (১৯০৩), নৌকাডুবি (১৯০৬), প্রজাপতির নির্বন্ধ (১৯০৮), গোরা (১৯১০), ঘরে বাইরে (১৯১৬), চতুরঙ্গ (১৯১৬), যোগাযোগ (১৯২৯), শেষের কবিতা (১৯২৯), দুই বোন (১৯৩৩), মালঞ্চ (১৯৩৪) ও চার অধ্যায় (১৯৩৪)।. বৌ-ঠাকুরাণীর হাট ও রাজর্ষি ঐতিহাসিক উপন্যাস। এদুটি রবীন্দ্রনাথের প্রথম উপন্যাস রচনার প্রচেষ্টা। এরপর থেকে ছোটগল্পের মতো তাঁর উপন্যাসগুলিও মাসিকপত্রের চাহিদা অনুযায়ী নবপর্যায় বঙ্গদর্শন, প্রবাসী, সবুজ পত্র, বিচিত্রা প্রভৃতি পত্রিকায় ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হয়।
চোখের বালি উপন্যাসে দেখানো হয়েছে সমসাময়িককালে বিধবাদের জীবনের নানা সমস্যা। নৌকাডুবি উপন্যাসটি আবার লেখা হয়েছে জটিল পারিবারিক সমস্যাগুলিকে কেন্দ্র করে। গোরা রবীন্দ্রনাথের শ্রেষ্ঠ উপন্যাস। এই উপন্যাসে দেখানো হয়েছে ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষার্ধের হিন্দু ও ব্রাহ্মসমাজের সংঘাত ও ভারতের তদানীন্তন সামাজিক ও রাজনৈতিক সমস্যাগুলি। ঘরে বাইরে উপন্যাসের বিষয়বস্তু ১৯০৫ সালের বঙ্গভঙ্গ-বিরোধী আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে নারী ও পুরুষের সম্পর্কের জটিলতা। স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কের জটিলতা আরও সূক্ষ্মভাবে উঠে এসেছে তাঁর পরবর্তী যোগাযোগ উপন্যাসেও। চতুরঙ্গ উপন্যাসটি রবীন্দ্রনাথের “ছোটগল্পধর্মী উপন্যাস”। স্ত্রীর অসুস্থতার সুযোগে স্বামীর অন্য স্ত্রীলোকের প্রতি আসক্তি – এই বিষয়টিকে উপজীব্য করে রবীন্দ্রনাথ দুই বোন ও মালঞ্চ উপন্যাসদুটি লেখেন। এর মধ্যে প্রথম উপন্যাসটি মিলনান্তক ও দ্বিতীয়টি বিয়োগান্তক। রবীন্দ্রনাথের শেষ উপন্যাস চার অধ্যায় সমসাময়িক বিপ্লবী আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে একটি বিয়োগান্তক প্রেমের উপন্যাস।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের উপন্যাস অবলম্বনে কয়েকটি চলচ্চিত্র নির্মিত হয়েছে। এগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য সত্যজিৎ রায়ের ঘরে বাইরে) ও ঋতুপর্ণ ঘোষের চোখের বালি।

প্রবন্ধ ও পত্রসাহিত্য

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বাংলা ও ইংরেজি ভাষায় অসংখ্য প্রবন্ধ রচনা করেছিলেন। এইসব প্রবন্ধে তিনি সমাজ, রাষ্ট্রনীতি, ধর্ম, সাহিত্যতত্ত্ব, ইতিহাস, ভাষাতত্ত্ব, ছন্দ, সংগীত ইত্যাদি নানা বিষয়ে নিজস্ব মতামত প্রকাশ করেন। রবীন্দ্রনাথের সমাজচিন্তামূলক প্রবন্ধগুলি সমাজ (১৯০৮) সংকলনে সংকলিত হয়েছে। রবীন্দ্রনাথের বিভিন্ন সময়ে লেখা রাজনীতি-সংক্রান্ত প্রবন্ধগুলি সংকলিত হয়েছে কালান্তর (১৯৩৭) সংকলনে। রবীন্দ্রনাথের ধর্মভাবনা ও আধ্যাত্মিক অভিভাষণগুলি সংকলিত হয়েছে ধর্ম (১৯০৯) ও শান্তিনিকেতন (১৯০৯-১৬) অভিভাষণমালায়। রবীন্দ্রনাথের ইতিহাস-সংক্রান্ত প্রবন্ধগুলি স্থান পেয়েছে ভারতবর্ষ (১৯০৬), ইতিহাস (১৯৫৫) ইত্যাদি গ্রন্থে। সাহিত্য (১৯০৭), সাহিত্যের পথে (১৯৩৬) ও সাহিত্যের স্বরূপ (১৯৪৩) গ্রন্থে রবীন্দ্রনাথ সাহিত্যতত্ত্ব আলোচনা করেছেন। রবীন্দ্রনাথ ধ্রুপদি ভারতীয় সাহিত্য ও আধুনিক সাহিত্যের সমালোচনা করেছেন যথাক্রমে প্রাচীন সাহিত্য (১৯০৭) ও আধুনিক সাহিত্য (১৯০৭) গ্রন্থদুটিতে। লোকসাহিত্য (১৯০৭) প্রবন্ধমালায় তিনি আলোচনা করেছেন বাংলা লোকসাহিত্যের প্রকৃতি। ভাষাতত্ত্ব নিয়ে রবীন্দ্রনাথের চিন্তাভাবনা লিপিবদ্ধ রয়েছে শব্দতত্ত্ব (১৯০৯), বাংলা ভাষা পরিচয় (১৯৩৮) ইত্যাদি গ্রন্থে। ছন্দ ও সংগীত নিয়ে তিনি আলোচনা করেছেন যথাক্রমে ছন্দ (১৯৩৬) ও সংগীতচিন্তা (১৯৬৬) গ্রন্থে। বিশ্বভারতীর প্রতিষ্ঠাতা রবীন্দ্রনাথ তাঁর শিক্ষা-সংক্রান্ত ভাবনাচিন্তার কথা প্রকাশ করেছেন শিক্ষা (১৯০৮) প্রবন্ধমালায়। ন্যাশনালিজম (ইংরেজি: Nationalism, ১৯১৭) গ্রন্থে রবীন্দ্রনাথ উগ্র জাতীয়তাবাদের বিশ্লেষণ করে তার বিরোধিতা করেছেন। অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে তিনি দর্শন বিষয়ে যে বিখ্যাত বক্তৃতাগুলি দিয়েছিলেন সেগুলি রিলিজিয়ন অফ ম্যান (ইংরেজি: Religion of Man, ১৯৩০; বাংলা অনুবাদ মানুষের ধর্ম, ১৯৩৩) নামে সংকলিত হয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের প্রেক্ষাপটে লেখা জন্মদিনের অভিভাষণ সভ্যতার সংকট (১৯৪১) তাঁর সর্বশেষ প্রবন্ধগ্রন্থ। জ্যোতির্বিজ্ঞান বিষয়ে রবীন্দ্রনাথ বিশ্বপরিচয় (১৯৩৭) নামে একটি তথ্যমূলক প্রবন্ধগ্রন্থ রচনা করেছিলেন। জীবনস্মৃতি (১৯১২), ছেলেবেলা (১৯৪০) ও আত্মপরিচয় (১৯৪৩) তাঁর আত্মকথামূলক গ্রন্থ।
রবীন্দ্রনাথের সামগ্রিক পত্রসাহিত্য আজ পর্যন্ত উনিশটি খণ্ডে প্রকাশিত হয়েছে। এছাড়া ছিন্নপত্র ও ছিন্নপত্রাবলী (ভ্রাতুষ্পুত্রী ইন্দিরা দেবী চৌধুরাণীকে লেখা), ভানুসিংহের পত্রাবলী (রানু অধিকারীকে (মুখোপাধ্যায়) লেখা) ও পথে ও পথের প্রান্তে (নির্মলকুমারী মহলানবিশকে লেখা) বই তিনটি রবীন্দ্রনাথের তিনটি উল্লেখযোগ্য পত্রসংকলন।

নাট্যসাহিত্য

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর একাধারে ছিলেন নাট্যকার ও নাট্যাভিনেতা। জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ির পারিবারিক নাট্যমঞ্চে মাত্র ষোলো বছর বয়সে অগ্রজ জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর রচিত হঠাৎ নবাব নাটকে (মলিয়ের লা বুর্জোয়া জাঁতিরোম অবলম্বনে রচিত) ও পরে জ্যোতিরিন্দ্রনাথেরই অলীকবাবু নাটকে নামভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন রবীন্দ্রনাথ। ১৮৮১ সালে তাঁর প্রথম গীতিনাট্য বাল্মীকি-প্রতিভা মঞ্চস্থ হয়। এই নাটকে তিনি ঋষি বাল্মীকির ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন। সালে রবীন্দ্রনাথ রামায়ণের উপাখ্যান অবলম্বনে কালমৃগয়া নামে আরও একটি গীতিনাট্য রচনা করেছিলেন। এই নাটক মঞ্চায়নের সময় তিনি অন্ধমুনির ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন।
গীতিনাট্য রচনার পর রবীন্দ্রনাথ কয়েকটি কাব্যনাট্য রচনা করেন। শেকসপিয়রীয় পঞ্চাঙ্ক রীতিতে রচিত তাঁর রাজা ও রাণী (১৮৮৯) ও বিসর্জন (১৮৯০) বহুবার সাধারণ রঙ্গমঞ্চে অভিনীত হয় এবং তিনি নিজে এই নাটকগুলিতে অভিনয়ও করেন। ১৮৮৯ সালে রাজা ও রাণী নাটকে বিক্রমদেবের ভূমিকায় অভিনয় করেন রবীন্দ্রনাথ। বিসর্জন নাটকটি দুটি ভিন্ন সময়ে মঞ্চায়িত করেছিলেন তিনি। ১৮৯০ সালের মঞ্চায়নের সময় যুবক রবীন্দ্রনাথ বৃদ্ধ রঘুপতির ভূমিকায় এবং ১৯২৩ সালের মঞ্চায়নের সময় বৃদ্ধ রবীন্দ্রনাথ যুবক জয়সিংহের ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন। কাব্যনাট্য পর্বে রবীন্দ্রনাথের আরও দুটি উল্লেখযোগ্য নাটক হল চিত্রাঙ্গদা (১৮৯২) ও মালিনী (১৮৯৬)।
কাব্যনাট্যের পর রবীন্দ্রনাথ প্রহসন রচনায় মনোনিবেশ করেন। এই পর্বে প্রকাশিত হয় গোড়ায় গলদ (১৮৯২), বৈকুণ্ঠের খাতা (১৮৯৭), হাস্যকৌতুক (১৯০৭) ও ব্যঙ্গকৌতুক (১৯০৭)।. বৈকুণ্ঠের খাতা নাটকে রবীন্দ্রনাথ কেদারের ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন। ১৯২৬ সালে তিনি প্রজাপতির নির্বন্ধ উপন্যাসটিকেও চিরকুমার সভা নামে একটি প্রহসনমূলক নাটকের রূপ দেন।
১৯০৮ সাল থেকে রবীন্দ্রনাথ রূপক-সাংকেতিক তত্ত্বধর্মী নাট্যরচনা শুরু করেন। ইতিপূর্বে প্রকৃতির প্রতিশোধ (১৮৮৪) নাটকে তিনি কিছুটা রূপক-সাংকেতিক আঙ্গিক ব্যবহার করেছিলেন। কিন্তু ১৯০৮ সালের পর থেকে একের পর এক নাটক তিনি এই আঙ্গিকে লিখতে শুরু করেন। এই নাটকগুলি হল: শারদোৎসব (১৯০৮), রাজা (১৯১০), ডাকঘর (১৯১২), অচলায়তন (১৯১২), ফাল্গুনী (১৯১৬), মুক্তধারা (১৯২২), রক্তকরবী (১৯২৬), তাসের দেশ (১৯৩৩), কালের যাত্রা (১৯৩২) ইত্যাদি। এই সময় রবীন্দ্রনাথ প্রধানত শান্তিনিকেতনে মঞ্চ তৈরি করে ছাত্রছাত্রীদের নিয়ে অভিনয়ের দল গড়ে মঞ্চস্থ করতেন। কখনও কখনও কলকাতায় গিয়েও ছাত্রছাত্রীদের নিয়ে নাটক মঞ্চস্থ করতেন তিনি। এই সব নাটকেও একাধিক চরিত্রে অভিনয় করেন রবীন্দ্রনাথ। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য: ১৯১১ সালে শারদোৎসব নাটকে সন্ন্যাসী এবং রাজা নাটকে রাজা ও ঠাকুরদাদার যুগ্ম ভূমিকায় অভিনয়; ১৯১৪ সালে অচলায়তন নাটকে অদীনপুণ্যের ভূমিকায় অভিনয়; ১৯১৫ সালে ফাল্গুনী নাটকে অন্ধ বাউলের ভূমিকায় অভিনয়; ১৯১৭ সালে ডাকঘর নাটকে ঠাকুরদা, প্রহরী ও বাউলের ভূমিকায় অভিনয়। নাট্যরচনার পাশাপাশি এই পর্বে ছাত্রছাত্রীদের অভিনয়ের প্রয়োজনে রবীন্দ্রনাথ পুরোন নাটকগুলি সংক্ষিপ্ত সংস্করণ করে নতুন নামে প্রকাশ করেন। শারদোৎসব নাটকটি হয় ঋণশোধ (১৯২১), রাজা হয় অরূপরতন (১৯২০), অচলায়তন হয় গুরু (১৯১৮), গোড়ায় গলদ হয় শেষরক্ষা (১৯২৮), রাজা ও রাণী হয় তপতী (১৯২৯) এবং প্রায়শ্চিত্ত হয় পরিত্রাণ (১৯২৯)।
১৯২৬ সালে নটীর পূজা নাটকে অভিনয়ের সঙ্গে সঙ্গে নাচ ও গানের প্রয়োগ ঘটিয়েছিলেন রবীন্দ্রনাথ। এই ধারাটিই তাঁর জীবনের শেষ পর্বে “নৃত্যনাট্য” নামে পূর্ণ বিকাশ লাভ করে। নটীর পূজা নৃত্যনাট্যের পর রবীন্দ্রনাথ একে একে রচনা করেন শাপমোচন (১৯৩১), তাসের দেশ (১৯৩৩), নৃত্যনাট্য চিত্রাঙ্গদা (১৯৩৬), নৃত্যনাট্য চণ্ডালিকা (১৯৩৮) ও শ্যামা (১৯৩৯)।. এগুলিও শান্তিনিকেতনের ছাত্রছাত্রীরাই প্রথম মঞ্চস্থ করেছিলেন।

সংগীত ও নৃত্যকলা

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ১৯১৫টি গান রচনা করেছিলেন। ধ্রুপদি ভারতীয় সংগীত, বাংলা লোকসংগীত ও ইউরোপীয় সংগীতের ধারা তিনটিকে আত্মস্থ করে তিনি একটি স্বকীয় সুরশৈলীর জন্ম দেন। রবীন্দ্রনাথ তাঁর বহু কবিতাকে গানে রূপান্তরিত করেছিলেন। রবীন্দ্র-বিশেষজ্ঞ সুকুমার সেন রবীন্দ্রসংগীত রচনার ইতিহাসে চারটি পর্ব নির্দেশ করেছেন। প্রথম পর্বে তিনি জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুরের সৃষ্ট গীতের অনুসরণে গান রচনা শুরু করেছিলেন। দ্বিতীয় পর্যায়ে (১৮৮৪-১৯০০) পল্লীগীতি ও কীর্তনের অনুসরণে রবীন্দ্রনাথ নিজস্ব সুরে গান রচনা শুরু করেন। এই পর্বের রবীন্দ্রসংগীতে ঊনবিংশ শতাব্দীর বিশিষ্ট সংগীতস্রষ্টা মধুকান, রামনিধি গুপ্ত, শ্রীধর কথক প্রমুখের প্রভাবও সুস্পষ্ট। এই সময় থেকেই তিনি স্বরচিত কবিতায় সুর দিয়ে গান রচনাও শুরু করেছিলেন। ১৯০০ সালে শান্তিনিকেতনে বসবাস শুরু করার পর থেকে রবীন্দ্রসংগীত রচনার তৃতীয় পর্বের সূচনা ঘটে। এই সময় রবীন্দ্রনাথ বাউল গানের সুর ও ভাব তাঁর নিজের গানের অঙ্গীভূত করেন। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর রবীন্দ্রনাথের গান রচনার চতুর্থ পর্বের সূচনা হয়। কবির এই সময়কার গানের বৈশিষ্ট্য ছিল নতুন নতুন ঠাটের প্রয়োগ এবং বিচিত্র ও দুরূহ সুরসৃষ্টি। তাঁর রচিত সকল গান সংকলিত হয়েছে গীতবিতান গ্রন্থে। এই গ্রন্থের “পূজা”, “প্রেম”, “প্রকৃতি”, “স্বদেশ”, “আনুষ্ঠানিক” ও “বিচিত্র” পর্যায়ে মোট দেড় হাজার গান সংকলিত হয়। পরে গীতিনাট্য, নৃত্যনাট্য, নাটক, কাব্যগ্রন্থ ও অন্যান্য সংকলন গ্রন্থ থেকে বহু গান এই বইতে সংকলিত হয়েছিল। ইউরোপীয় অপেরার আদর্শে বাল্মীকি-প্রতিভা, কালমৃগয়া গীতিনাট্য এবং চিত্রাঙ্গদা, চণ্ডালিকা, ও শ্যামা সম্পূর্ণ গানের আকারে লেখা।
রবীন্দ্রনাথের সময় বাংলার শিক্ষিত পরিবারে নৃত্যের চর্চা নিষিদ্ধ ছিল। কিন্তু রবীন্দ্রনাথ বিশ্বভারতীর পাঠক্রমে সংগীত ও চিত্রকলার সঙ্গে সঙ্গে নৃত্যকেও অন্তর্ভুক্ত করেন। ভারতের বিভিন্ন প্রদেশের লোকনৃত্য ও ধ্রুপদি নৃত্যশৈলীগুলির সংমিশ্রণে তিনি এক নতুন শৈলীর প্রবর্তন করেন। এই শৈলীটি “রবীন্দ্রনৃত্য” নামে পরিচিত। রবীন্দ্রনাথের গীতিনাট্য ও নৃত্যনাট্যগুলিতে গানের পাশাপাশি নাচও অপরিহার্য। বিশিষ্ট নৃত্যশিল্পী উদয় শংকর যে আধুনিক ভারতীয় নৃত্যধারার প্রবর্তন করেছিলেন, তার পিছনেও রবীন্দ্রনাথের প্রেরণা ছিল।

চিত্রকলা

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর নিয়মিত ছবি আঁকা শুরু করেন প্রায় সত্তর বছর বয়সে। চিত্রাঙ্কনে কোনো প্রথাগত শিক্ষা তাঁর ছিল না। প্রথমদিকে তিনি লেখার হিজিবিজি কাটাকুটিগুলিকে একটি চেহারা দেওয়ার চেষ্টা করতেন। এই প্রচেষ্টা থেকেই তাঁর ছবি আঁকার সূত্রপাত ঘটে। ১৯২৮ থেকে ১৯৩৯ কালপরিধিতে অঙ্কিত তাঁর স্কেচ ও ছবির সংখ্যা আড়াই হাজারের ওপর, যার ১৫৭৪টি শান্তিনিকেতনের রবীন্দ্রভবনে সংরক্ষিত আছে। দক্ষিণ ফ্রান্সের শিল্পীদের উৎসাহে ১৯২৬ খ্রিস্টাব্দে তাঁর প্রথম চিত্র প্রদর্শনী হয় প্যারিসের পিগাল আর্ট গ্যালারিতে। এরপর সমগ্র ইউরোপেই কবির একাধিক চিত্র প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়। ছবিতে রং ও রেখার সাহায্যে রবীন্দ্রনাথ সংকেতের ব্যবহার করতেন। রবীন্দ্রনাথ প্রাচ্য চিত্রকলার পুনরুত্থানে আগ্রহী হলেও, তাঁর নিজের ছবিতে আধুনিক বিমূর্তধর্মিতাই বেশি প্রস্ফুটিত হয়েছে। মূলত কালি-কলমে আঁকা স্কেচ, জলরং ও দেশজ রঙের ব্যবহার করে তিনি ছবি আঁকতেন। তাঁর ছবিতে দেখা যায় মানুষের মুখের স্কেচ, অনির্ণেয় প্রাণীর আদল, নিসর্গদৃশ্য, ফুল, পাখি ইত্যাদি। তিনি নিজের প্রতিকৃতিও এঁকেছেন। নন্দনতাত্ত্বিক ও বর্ণ পরিকল্পনার দিক থেকে তাঁর চিত্রকলা বেশ অদ্ভুত ধরণেরই বলে মনে হয়। তবে তিনি একাধিক অঙ্কনশৈলী রপ্ত করেছিলেন। তন্মধ্যে, কয়েকটি শৈলী হল- নিউ আয়ারল্যান্ডের হস্তশিল্প, কানাডার (ব্রিটিশ কলম্বিয়া প্রদেশ) পশ্চিম উপকূলের “হাইদা” খোদাইশিল্প ও ম্যাক্স পেকস্টাইনের কাঠখোদাই শিল্প।

রাজনৈতিক মতাদর্শ ও শিক্ষাচিন্তা

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের রাজনৈতিক দর্শন অত্যন্ত জটিল। তিনি সাম্রাজ্যবাদের বিরোধিতা ও ভারতীয় জাতীয়তাবাদীদের সমর্থন করতেন। ১৮৯০ সালে প্রকাশিত মানসী কাব্যগ্রন্থের কয়েকটি কবিতায় রবীন্দ্রনাথের প্রথম জীবনের রাজনৈতিক ও সামাজিক চিন্তাভাবনার পরিচয় পাওয়া যায়। হিন্দু-জার্মান ষড়যন্ত্র মামলার তথ্যপ্রমাণ এবং পরবর্তীকালে প্রকাশিত তথ্য থেকে জানা যায়, রবীন্দ্রনাথ গদর ষড়যন্ত্রের কথা শুধু জানতেনই না, বরং উক্ত ষড়যন্ত্রে জাপানি প্রধানমন্ত্রী তেরাউচি মাসাতাকি ও প্রাক্তন প্রিমিয়ার ওকুমা শিগেনোবুর সাহায্যও প্রার্থনা করেছিলেন। আবার ১৯২৫ সালে প্রকাশিত একটি প্রবন্ধে স্বদেশী আন্দোলনকে “চরকা-সংস্কৃতি” বলে বিদ্রুপ করে রবীন্দ্রনাথ কঠোর ভাষায় তার বিরোধিতা করেন। ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদ তাঁর চোখে ছিল “আমাদের সামাজিক সমস্যাগুলির রাজনৈতিক উপসর্গ”।. তাই বিকল্প ব্যবস্থা হিসেবে বৃহত্তর জনসাধারণের স্বনির্ভরতা ও বৌদ্ধিক উন্নতির উপর অধিক গুরুত্ব আরোপ করেন তিনি। ভারতবাসীকে অন্ধ বিপ্লবের পন্থা ত্যাগ করে দৃঢ় ও প্রগতিশীল শিক্ষার পন্থাটিকে গ্রহণ করার আহ্বান জানান রবীন্দ্রনাথ।
রবীন্দ্রনাথের এই ধরনের মতাদর্শ অনেককেই বিক্ষুব্ধ করে তোলে। ১৯১৬ সালের শেষ দিকে সানফ্রান্সিসকোয় একটি হোটেলে অবস্থানকালে একদল চরমপন্থী বিপ্লবী রবীন্দ্রনাথকে হত্যার ষড়যন্ত্র করেছিল। কিন্তু নিজেদের মধ্যে মতবিরোধ উপস্থিত হওয়ায় তাঁদের পরিকল্পনা ব্যর্থ হয়েছিল। ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনে রবীন্দ্রনাথের গান ও কবিতার ভূমিকা অনস্বীকার্য। ১৯১৯ সালে জালিয়ানওয়ালাবাগ হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে তিনি নাইটহুড বর্জন করেন। নাইটহুড প্রত্যাখ্যান-পত্রে লর্ড চেমসফোর্ডকে রবীন্দ্রনাথ লিখেছিলেন, “আমার এই প্রতিবাদ আমার আতঙ্কিত দেশবাসীর মৌনযন্ত্রণার অভিব্যক্তি।” রবীন্দ্রনাথের “চিত্ত যেথা ভয়শূন্য” ও “একলা চলো রে” রাজনৈতিক রচনা হিসেবে ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করে। “একলা চলো রে” গানটি গান্ধীজির বিশেষ প্রিয় ছিল। যদিও মহাত্মা গান্ধীর সঙ্গে রবীন্দ্রনাথের সম্পর্ক ছিল অম্লমধুর। হিন্দু নিম্নবর্ণীয় জন্য পৃথক নির্বাচন ব্যবস্থাকে কেন্দ্র করে গান্ধীজি ও আম্বেডকরের যে মতবিরোধের সূত্রপাত হয়, তা নিরসনেও রবীন্দ্রনাথ বিশেষ ভূমিকা গ্রহণ করেছিলেন। ফলে গান্ধীজিও তাঁর অনশন কর্মসূচি প্রত্যাহার করে নিয়েছিলেন।
রবীন্দ্রনাথ তাঁর “তোতা-কাহিনী” গল্পে বিদ্যালয়ের মুখস্ত-সর্বস্ব শিক্ষাকে প্রতি তীব্রভাবে আক্রমণ করেন। এই গল্পে রবীন্দ্রনাথ দেখিয়েছিলেন, দেশের ছাত্রসমাজকে খাঁচাবদ্ধ পাখিটির মতো শুকনো বিদ্যা গিলিয়ে কিভাবে তাদের বৌদ্ধিক মৃত্যুর পথে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে। ১৯১৭ সালের ১১ অক্টোবর ক্যালিফোর্নিয়ার সান্টা বারবারা ভ্রমণের সময় রবীন্দ্রনাথ শিক্ষা সম্পর্কে প্রথাবিরুদ্ধ চিন্তাভাবনা শুরু করেন। শান্তিনিকেতন আশ্রমকে দেশ ও ভূগোলের গণ্ডীর বাইরে বের করে ভারত ও বিশ্বকে একসূত্রে বেঁধে একটি বিশ্ব শিক্ষাকেন্দ্র স্থাপনের পরিকল্পনাও এই সময়েই গ্রহণ করেছিলেন কবি। ১৯১৮ সালের ২২ অক্টোবর বিশ্বভারতী নামাঙ্কিত তাঁর এই বিদ্যালয়ের শিলান্যাস করা হয়েছিল। এরপর ১৯২২ সালের ২২ ডিসেম্বর উদ্বোধন হয়েছিল এই বিদ্যালয়ের। বিশ্বভারতীতে কবি সনাতন ভারতীয় শিক্ষাব্যবস্থার ব্রহ্মচর্য ও গুরুপ্রথার পুনর্প্রবর্তন করেছিলেন। এই বিদ্যালয়ের জন্য অর্থসংগ্রহ করতে কঠোর পরিশ্রম করেছিলেন তিনি। নোবেল পুরস্কারের অর্থমূল্য হিসেবে প্রাপ্ত সম্পূর্ণ অর্থ তিনি ঢেলে দিয়েছিলেন এই বিদ্যালয়ের পরিচালন খাতে। নিজেও শান্তিনিকেতনের অধ্যক্ষ ও শিক্ষক হিসেবেও অত্যন্ত ব্যস্ত থাকতেন তিনি। সকালে ছাত্রদের ক্লাস নিতেন এবং বিকেল ও সন্ধ্যায় তাদের জন্য পাঠ্যপুস্তক রচনা করতেন।১৯১৯ সাল থেকে ১৯২১ সালের মধ্যে বিদ্যালয়ের জন্য অর্থ সংগ্রহ করতে তিনি একাধিকবার ইউরোপ ও আমেরিকা ভ্রমণ করেন।





 


An application for a transfer certificate By Teach-Bangla


প্রিয় শিক্ষার্থীরা আজকে তোমাদের জন্য Transfer Certificate নামে একটি অ্যাপ্লিকেশন শেয়ার করলাম । আশা করি তোমাদের কাজে লাগবে । আমাদের ওয়েব সাইটে নিয়মিত ভিজিট করো ইনশাআল্লাহ সকল application ধীরে ধীরে তোমাদের সাথে শেয়ার করবো ।


An application for a transfer certificate
11, April , 2016
The Headmaster
Uttar Narayen Pur High School
Shaduhati,Jhenaidah
  
Sub: An application for a transfer certificate
  
Sir,
I beg most recpectfully (kª×vmnKv‡i) to state that I am a regular (wbqwgZ) student of class 6/ 7/ 8/ 9/ 10 in your school/ madrasah. My father is a government employee. Recently he has been transferred from Dhaka to Khulna. As a result (d‡j), our family will be shifted (¯’vbvšÍwiZ) to Khulna soon (kxNªB). So it is not possible for me to study in your school any longer (Avi). Now, I need a transfer certificate for my admission to a school there

I therefore, pray and hope that you would be kind enough to grant (w`‡Z ivwR nËqv) me a transfer certificate.

I remain
Sir
Your most obedient (AbyMZ) pupil.
Mim Akter
Class : Nine
Roll No : 03

Kinds of sentence & beginning to end Discussion

আমি আল ফারুক ,ইংরেজি শিক্ষাকে আপনাদের জন্য আরও সহজ, সুন্দর ও আকর্ষণীয় করার জন্য ধারাবাহিকভাবে আমি আপনাদের সাথে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা নিয়ে আসব।এই আলোচনাগুলো আমার নিজের লিখিত নোট থেকে আপনাদের সামনে উপস্থিত করছি। হয়তো এমনো হতে পারে অনেকের কাছেই বিষয়টি বোরিং মানে বিরক্ত  লাগবে। কিন্তু ভেবে দেখুন তো একবার আপনার পাশের আরেকটি ভাই বা আপনারই এক ছোট ভাইয়ের ভীষণ কাজের জিনিস বলে বিবেচিত হতে পারে। আর কথা না বারিয়ে কাজের কথায় আসি আমি একেবারে শুরু থেকেই শুরু করছি-                                                                Click Here !!!!

                              The Sentence :

ভাষার প্রধান কাজ হচ্ছে মানুষের মনের ভাব প্রকাশ করা। কোন শব্দ বা শব্দগুচ্ছ যখন মনের একটি ভাব সম্পূর্ণ প্রকাশ করে তখন তাকে Sentence বা বাক্য বলে or ,দুই বা ততোধিক অর্থবোধক Word বা শব্দ পাশাপাশি সঠিক ভাবে সাজালে যদি কোন বিষয়ে বক্তার মনোভাব সম্পূর্ণ ভাবে প্রকাশ পায়, তবে তাকে Sentence বা বাক্য বলে। আমাদের হাতে যেমন ৫টি আঙ্গুল আছে এবং এক একটি আঙ্গুলের গঠন এক এক রকম, তেমনি ইংরেজিতেও ৫টি Sentence বা বাক্য আছে  এবং এদের এক একটি গঠন এক এক রকম।। যেমনঃ o
               I can play football. (মনের ভাবটি সম্পূর্ণ প্রকাশ পেয়েছে ।   অতএব, এটি একটি sentence বা বাক্য)
               He had not………. (মনের ভাবটি সম্পূর্ণ প্রকাশ পায়নি ।   অতএব, এটি একটি sentence বা বাক্য নয়)
              1. আমি ভাত খাই - I eat rice.
              2. তাহারা মাঠে খেলিতেছে - They are playing in the field.
              3. আল্লাহ তোমার মঙ্গল করুক - May Allah bless you.
              4. এদিকে এসো - Come here.
              5. হায় ! লোকটি মারা গেছে - Alas ! The Man is dead.
Parts of Sentence: Sentence এর দুইটি অংশ থাকে।  যথাঃ   Subject এবং Predicate
Subject: কোন Sentence এ যার সম্পর্কে কিছু বলা হয় তাকে Subject বলে। যেমনঃ
Fish can not fly. (এখানে Fish সম্পর্কে একটি তথ্য দেয়া হয়েছে। অতএব, Fish একটি subject)
Predicate: Sentence এ Subject সম্পর্কে যা কিছু বলা হয় তাকে Predicate বলে। যেমনঃ
The cow lives on grass. (এখানে Subject সম্পর্কে বলা হয়েছে lives on grass, অতএব, lives on grass হল Predicate)।
Subject সাধারণত Sentence এর শুরুতে বসে। তবে এর ব্যতিক্রমও দেখা যায়। যেমনঃ
(   ) Never tell a lie. (Imperative sentence বিধায় এখানে Subject উহ্য আছে)
Got victory the people. (ব্যতিক্রমধর্মী এই Sentence টিতে Subject শেষে বসেছে)
Kinds of Sentence: Sentence কি ধরনের অর্থ প্রকাশ করে তার উপর ভিত্তি করে Sentence কে পাঁচটি ভাগে বিভক্ত করা হয়েছে। যথাঃ
              1. Assertive Sentence ( বর্ণনা মূলক বাক্য )
                 2. Interrogative Sentence ( প্রশ্নবোধক বাক্য )
                 3. Imperative Sentence ( অনুঙ্গাসূচক বাক্য )
                4. Optative Sentence ( প্রার্থনাসূচক বাক্য )
                5. Exclamatory Sentence ( বিস্ময় সূচক বাক্য)
01.Assertive Sentence (বিবৃতি মূলক বা সাধারণ বাক্য)     কিছু Sentence আছে যেগুলো কোন সাধারণ কথা বা বিবৃতি প্রকাশ করে থাকে। এ ধরনের Sentence ই হল Assertive Sentence। যেমনঃ
The police caught the thief. অথবা Dhaka is famous for mosques.
                                                             Assertive Sentence দুই প্রকার। যথাঃ
Affirmative Sentence (হ্যাঁ সূচক বাক্য): কোন Sentence এ যদি কিছু স্বীকার করা হয় বা হ্যাঁ সূচক জবাব দেয়া হয় তবে তাকে Affirmative Sentence বলে। যেমনঃ
My father gave me the book. অথবা I have taken my dinner already.

Structure বা গঠনঃ Subject + Principal Verb + Object + Extension.
যেমনঃ                         Fahad    + plays                 + football + well.

Negative Sentence (না সূচক বাক্য): কোন Sentence এ যদি কিছু অস্বীকার করা হয় বা না সূচক জবাব দেয়া হয় তবে তাকে Negative Sentence বলে। যেমনঃ
My father did not give me the book. অথবা I have not taken my dinner yet.
Structure বা গঠনঃ Subject + Auxiliary Verb + not/no + Principal Verb + Object      + Exten.
যেমনঃ                         Fahad    + does                 + not            + play              + football    + well.

02.Interrogative Sentence ( প্রশ্নবোধক বাক্য ) : যে Sentence দ্বারা কোন প্রশ্ন করা হয় বা কোন কিছু জিজ্ঞাসা করা হয় তাকে Interrogative Sentence বা প্রশ্নবোধক বাক্য  বলে
যেমন :
1. আমি কি বই পড়ি ? -Do I read a book ?
2. সে কি স্কুলে যায় ? - Does he go to School ?
3. জেলেরা কি মাছ ধরিেতেছে ? - Are the fishermen catching fish ?
4. মা কি রান্না করিতেছে ? - Is Mother cooking ?
5. আলিমা কি টাইপ করিতেছে ? - Is Alima typing ?
6.  চৈতী কি খেলিতেছে ? - Is Chaity playing?
7. স্বপন কি কাজটি করিয়াছে ? -Has Swapan done the work ?
8. রাইশা কি পড়িতেছে ? - Is Raisha reading ?
9. মহিমা কি আঁককিতেছে - Is Mohima drawing ? 
10. মাহা কি খেলিতেছে ? - Is Maha playing ? 
03.Imperative Sentence ( অনুজ্ঞাসূচক বাক্য ) : যে Sentence দ্বারা আদেশ, উপদেশ বা অনুরোধ করা বুঝায় তাকে Imperative Sentence বা অনুজ্ঞাসূচক বাক্য বলে
যেমন :
1. এদিকে এসো - Come here.
2. কলমটি আন - Bring the pen.
3. বাইরে যাও - Go out.
4. মিথ্যা বলিবে না - Do not tell a lie.
5. মিথ্যা বলা মহাপাপ - To tell a lie is a great sin.
7.এখান থেকে বের হয়ে যাও - Get out from here.
8. বের হও - Get out.
9. আমাকে ফোন করার চেষ্টা করবে না - Do not try to call me.
10. কখনো আমার বাড়িতে আসার চেষ্টা করিবে না - Never try to come my house.
04.Optative Sentence (প্রার্থনাসূচক বাক্য) : যে Sentence দ্বারা মনের ইচ্ছা বা প্রার্থনা করা বুঝায় তাকে Optative Sentence বা প্রার্থনাসূচক বাক্য বলে যেমন:
1. আল্লহ তোমার মঙ্গল করুক - May Allah bless you.
2. বাংলাদেশ দীর্ঘজিবী হউক - live long Bangladesh.
3. আল্লাহ  তোমাকে সাহায্য করুক - May Allah help you.
05. Exclamatory Sentence ( বিস্ময় সূচক বাক্য ) : যে Sentence দ্বারা  বিস্ময় বা মনের আবেগ প্রকাশ করে তাকে Exclamatory Sentence বা বিস্ময় সূচক বাক্য বলে
যেমন :
1. কি সুন্দর শিশুটি - How beautiful the baby is !
2. কেমন বোকা তুমি - How fool you are !
3.কি আরামদায়ক বিছানাটি - How comfortable the bed is !
 4. হায় ! লোকটি মারা গেছে - Alas ! The man is dead.

AL FARUK
উদ্ভাস একাডেমিক কোচিং সেন্টার 
নারায়নপুর ত্রিমোহনী
ডাকবাংলা ঝিনাইদহ
 01731-452746,01936-573000

 
 


Write a dialogue between you and your friend Arif about your upcomming preparation for the examination. Teach-bangla


Teasc-bangla
01. A dialogue between you and your friend Arif about your upcomming  preparation for the examination By Teach-bangl.
                                                            =======      
                                        ==========================
                                                            =======
Myself       : Assalamu alikun , How are you, Arif ?
Arif            : Walikum Assalam , I am fine but you ?
Myself       : I am also fine by the grace of Allah but I’m worried about my upcoming exam. What about your preparation for the examination?
Arif            : Well, I’m going on well my studies. I am also worried about my exam.
Myself       : But tell me about your preparation in different subjects.
Arif            : You know I’m weak in English. That’s why, I’m taking special care in English. I’m having a detailed revision in other subjects.
Myself       : Are you taking help from any special books?
Arif            : Yes. But I study text book veryday carefully.
Myself       : I see. I must start working with the text book. What do you think?
Arif            : Yes. I think it’ll be helpful not only for English but also for other subjects.
Myself       : Thank your for your supportive suggestion. Wish your good luck.
Arif            : You’re most welcome.

====================================BY==================================
AL FARUK
উদ্ভাস একাডেমিক কোচিং সেন্টার 
নারায়নপুর ত্রিমোহনী
ডাকবাংলা ঝিনাইদহ
 01731-452746,01936-573000





An application to the Headmaster of your school praying for full-free studentship.



 Full-free studentship :



Suppose, your father is a farmer. His income is too small to maintain your educational expenses. So you need a full-free studentship to continue your studies. Now write an application to the Headmaster of your school praying for full-free studentship.
 


21,July, 2016
The Headmaster
Uttar Narayen Pur High School
Shaduhati,Jhenaidah

Sub: Prayer for full-freestudentship.


Sir,
I beg most recpectfully (শ্রদ্ধাসহকারে) to state that I am a regular (নিয়মিত) student of class 8/9 in your school / madrasah . My father is the only earning ( উপার্জনক্ষম) member of our family. He is a very poor farmer. He has to maintain (ভরণপোষন করা) a large family consisting (গঠিত) of eight members. Three of them (তাদের মধ্যে তিনজন) are school going. So it is very difficult (কঠিণ) for him to bear (পোষণ করা) my educational expenses (খরচপত্র) any longer. I cannot continue my education without a full-free studentship. So I much need of a full free studentship.

I therefore, pray and hope that you would be kind enough to great me a full-free studentship so that I can continue my studies without any difficulty (অসুবিধা).

I remain
Sir
Your most obedient (অনুগত) pupil.
Mim Akter
Class : eight
Roll No : 03